নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ মে, ২০২৪

সস্তা সিগারেটে বাড়ছে ধূমপায়ী

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়লেও গত ৫ অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটপ্রতি দাম সে তুলনায় বাড়েনি। যার প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহে। এর ফলে ধূমপায়ী কমার পরিবর্তে সস্তায় সিগারেট পাওয়ায় ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে অল্প দামে ধূমপানের সুযোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে এতে রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ শলাকার সিগারেট প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে তামাক নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করেছেন তারা। এছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাকের দামও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

সংস্থাটির সুপারিশে তিন স্তরে সিগারেটের কর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা, উচ্চস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ১১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভার (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) প্রচলন করা, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। আর ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রে জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধি করা, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, আর প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা থেকে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। তবে সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

তাদের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে আলোচকরা জানান, মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির কারণে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়েনি। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খানাপ্রতি মাসিক গড় আয় বেড়েছে ১০৩ শতাংশ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯৩ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং এগুলো তামাকপণ্যকে আরো সহজলভ্য করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০০ প্যাকেট সিগারেট ক্রয়ে ব্যক্তির আয়ের যতটুকু ব্যয় করতে হয় তা আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম, যা সিগারেটে উল্লেখযোগ্যহারে মূল্য বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নিম্নআয়ের মানুষ এমনিতেই অপুষ্টিতে ভোগে। কারণ পুষ্টিকর খাবার সব সময় সে পায় না। পরিশ্রম অনুযায়ী খাবারও তার শরীরে প্রবেশ করে না। এমন অবস্থায় পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেদিকে না খেয়াল করে এসব মানুষ ইচ্ছামতো ধূমপান করে। সিগারেটের দাম হাতের নাগালে হওয়ায় এসব মানুষের সিগারেট কিনতে অসুবিধা হচ্ছে না। অসুবিধায় তখনই পড়ছেন, যখন তারা বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। তখন চিকিৎসার জন্য ব্যয় করার কিছু থাকছে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close