নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ এপ্রিল, ২০২৪

জাতীয় পতাকার রূপকার শিব নারায়ণ আর নেই

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস (৭৮) মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার বিকালে কুমিল্লায় আনা হতে পারে শিব নারায়ণ দাসের মরদেহ।

শিব নারায়ণ দাশের একমাত্র ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, তার বাবা শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মারা গেছেন। তিনি তার বাবার জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে বলেছেন।

শিব নারায়ণ দাসের জন্ম কুমিল্লায়। তিনি শহরের বাগিচাগাঁও এলাকার সতীশচন্দ্র দাসের ছেলে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তার বাবাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিব নারায়ণ দাসের স্ত্রীর গীতশ্রী চৌধুরীও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের আদি বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে।

শিব নারায়ণ দাস ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি-১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।

সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান তখন ঢাকা নিউমার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিতুমীর হলের ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হলো পূর্বপাকিস্তানের মানচিত্র। শিবনারায়ণ দাস পরিশেষে নিপুণ হাতে মানচিত্রটি এঁকে দেন লাল বৃত্তের মাঝে। পরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পটুয়া কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নতুন রূপ দেন।

এদিকে তার মৃত্যু কুমিল্লা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন অনেকেই।

২০২৩ সালে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রনেতা হাসানুল হক ইনু, কাজী আরেফ আহমেদ, শিব নারায়ণ দাশসহ ২২ জন পতাকার নকশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরীও বীর মুক্তিযোদ্ধা। শিব নারায়ণ দাশের বাবা সতীশ চন্দ্র দাশকে ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে এই অপরাধে পাকিস্তানি হানাদাররা গুলি করে হত্যা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close