নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

১০ মাদক কারবারির ১৭৯ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

মাদক মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১০ মাদক কারবারির সম্পত্তি, জমি, বাড়ি, খামার জব্দ করেছে। যার আর্থিক মূল্যে প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা। ইয়াবা, মদ এবং ফেনসিডিল বিক্রি করে আয় করে তা মানিলন্ডারিং করেন তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, তারা প্রাথমিকভাবে ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মামলার মূল হোতাদের মাদক ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে অর্জিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ, ক্রয় করা জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পান। এসব মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ কোটি টাকা।

মোহাম্মদ আলী মিয়া আরো জানান, সিআইডি এরই মধ্যে ৩৫ মামলার মধ্যে ৩টি মামলায় মাদক কারবারিদের ৯.১৪ একর জমি ও দুটি বাড়ি (যার আনুমানিক মূল্য ৮.১১ কোটি টাকা) ক্রোক এবং মাদক সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং বিভিন্ন মামলায় ব্যাংকে গচ্ছিত ১ কোটি ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ফ্রিজ করেছে। আরো ৩৫.১৭৩ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১টি গাড়ি যার মূল্য আনুমানিক মূল্য ৩৬.৮২ কোটি টাকা ক্রোকের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

যে ১০ মাদক কারবারির সম্পত্তি জব্দ : সিআইডি জানিয়েছে, এই ১০ মাদক কারবারির তালিকায় প্রথমে আছেন কক্সবাজারের নুরুল হক ওরফে ভুট্টো (৩২)। তদন্তে তার ৪২ জন সহযোগীর তথ্য পেয়েছে সিআইডি। খুনলনার শফিক আলম ওরফে শফিক ওরফে শফি। তার নামে খুলনায় ২০২১ সালে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হয়। তিনি ইয়াবা বিক্রি করে ৭০০.৯৬ শতাংশ জমি করেছেন। যার দলিল মূল্য ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।

খুলনার লবণচরার শাহজাহান হাওলাদার (৫৮)। তিনি চট্টগ্রাম জেলার খুলশী ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, সিডিএ এভিনিউ শাখা অফিসসহ টেকনাফ থানার ডেইল পাড়া এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ও ইয়াবা বিক্রি করে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাচার করেছেন।

মাদক কারবারি শফিক আলম ওরফে শফিকের (৩৯) বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ টেকনাফ থানায় মানিলন্ডারিং মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি ছাড়াও তার সহযোগী মনির আলম (৩০), মো. রফিক আলম (৩৭), আবদুল গফুরের (৫৫) সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। তারা সবাই শফিকের পরিবারের সদস্য।

মাদক কারবারি শাহিন আলমের বিরুদ্ধে পাবনার আতাইকুলা থানায় ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ মানিলন্ডারিং মামলা হয়। তিনি গাঁজা ও ইয়াবা কারবার করে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা লন্ডারিং করেছেন।

২০২০ সালের ২০ মার্চে কক্সবাজারের টেকনাফে মানিলন্ডারিং মামলায় অভিযুক্ত ইয়াবা কারবারি নুরুল কবির। কবির ইয়াবার টাকায় আয় করে ১১ কোটি ৫ লাখ টাকা পাচার করেছে।

২০২১ সালের ২০ অক্টোবর টেকনাফের আরেক মাদক কারবারি সিদ্দিক আহমেদের (৫৩) বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মামলা হয়। মামলার তদন্তে উঠে আসে তার এই মাদক ব্যবসায় অন্যতম সহযোগী ছিল ছেলে ফরিদুল আলম ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে ফরিদ (৩৮), ছেলে রবিউল আলম (২৭), মো. জসিম উদ্দীন (২৩), সৈয়দ আহমেদ ওরফে সৈয়দ হোছইন, আবদুল মালেক ওরফে মালেক হোছাইন (৩২), শফিকুল ইসলাম ওরফে সামসুল (২৫)। তাদের মাধ্যমে সিদ্দিক ইয়াবা কারবার করে দেড় কোটি টাকার লন্ডারিং করেন। যে অর্থের সন্ধান পায় সিআইডি।

ঢাকার মাদক গডফাদার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদাবর থানার মানিলন্ডারিং মামলা হয়। মামলার তদন্তে ওঠে আসে ইয়াবা কারবারি করে নুরুল প্রায় ১৩ কোটি টাকা পাচার করেছেন। তার ক্রোকের প্রক্রিয়াধীন সম্পদের পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ৪টি বাড়ি, ০.৮৮ একর জমি, ১টি গাড়ি ও স্বর্ণালংকার শনাক্ত করেছে সিআইডি।

গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানায় মাদক কারবারি পারুলের (৩৩) বিরুদ্ধে গেল বছরের ৩০ অক্টোবর মানিলন্ডারিং মামলা হয়। তার মামলা তদন্তে করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ওই এলাকার খালেদা বেগম (৪০), রিতা (৩৫), জামাই লিটন (৫০), জালাল (৪০), ছোটন (৩৫), পলাশ (২৮), ফরহাদ (৩৫), শুক্কুর আলী ছিল তার অন্যতম সহযোগী। তারা সবাই প্রতিবেশী হলেও মাদক মামলায় নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। পারুল ইয়াবা ও গাঁজা কারবারি করে প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পাচার করেছে। তার সম্পত্তির পরিমাণ ১৮.৬৫ শতাংশ জমি এবং ১টি বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা ক্রোক প্রক্রিয়াধীন।

টেকনাফ থানায় ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মাদক কারবারি ফজর আলীর (৩৯) বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা হয়। সেই মামলার তদন্তে উঠে আসে তার বোন জামাই গনু মিয়া (৬১) ও পার্টনার আবদুর রহিম প্রকাশ রানা (৩৪) ছিল ফজর আলীর অন্যতম সহযোগী। ইয়াবা কারবারি ফজর আলী প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাচার করেছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ০.২০৬৭ একর জমি। যার মূল্য অনুমান ৩৯ লাখ টাকা। যা ক্রোক প্রক্রিয়াধীন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close