নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ভোজ্যতেল নিয়ে ভোজবাজি

শুল্ক অব্যাহতির মেয়াদ শেষে একদিকে মিল মালিকরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, অন্যদিকে এতে আপত্তি জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মিল মালিকদের এভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

রোজার মাস সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, চাল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। সেখানে তেলের শুল্ক কমানো হয়েছিল ৫ শতাংশ, যা কার্যকর ছিল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এর ওপর ভিত্তি করে গত ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করেছিলেন মিল মালিকরা। রোজা সামনে রেখে মিল মালিকদের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তবে শুল্ক প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষের দিন গত সোমবার ফের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটাবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

‘ভোজ্যতেলের মূল্য ভ্যাট অব্যাহতি পূর্ববর্তী মূল্যে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে’ শিরোনামে ওই চিঠিতে বলা হয়, শুল্ক অব্যাহতির বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা এসআরওর মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় ১৬ এপ্রিল থেকে পাম তেল ও সয়াবিন তেল ভ্যাট অব্যাহতির আগের মূল্যে সরবরাহ করা হবে। ফলে এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি হবে।

রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মিলারদের ওই চিঠির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম কোনো অবস্থাতেই আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ভ্যাট সুবিধার মেয়াদ যেহেতু শেষ হয়েছে, সুতরাং তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য, আমদানি মূল্য এবং অন্য বিষয় বিশ্লেষণ করে ট্যারিফ কমিশন দেখবে। দামটা কেমন হওয়া উচিত সেটা ট্যারিফ কমিশন দেখার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।’

সরকারকে পাশ কাটিয়ে মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে যেভাবে দাম ঘোষণা অবহিত করেছে, তা গ্রহণযোগ্য কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোনো চিঠি আমার হাতে আসেনি। আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে খোঁজ নেব। তবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির জটিলতা কাটাতে স্থায়ী দোকান করা হবে বলে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টিসিবির পণ্যগুলো এতদিন বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে বিক্রি হতো। আমরা চেষ্টা করছি, আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে টিসিবির দোকানগুলোকে স্থায়ী জায়গায় নিয়ে আসার, যাতে মানুষের একটি দিন নষ্ট না হয়। তারা যাতে সেখানে গিয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেটার একটা কার্যক্রম আমরা চলমান রেখেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘টিসিবি সাধারণত একত্রে চার থেকে পাঁচটি পণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনেক সময় এমন হয়, একটি পণ্য পৌঁছাতে দেরি হলে জেলা প্রশাসকরা বাকি পণ্যগুলোকেও আটকে রাখেন, সবগুলো একত্রে দেবেন বলে। কিন্তু আমি যখন স্থায়ী দোকান করে দেব, তখন যে মাল যখনই দোকানে চলে যাবে, তখনই সেটা বিক্রি শুরু হবে।’ ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।

এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৩ টাকা দরে। মঙ্গলবার থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘ভোজ্যতেলের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ গত ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এ কারণে ১৬ এপ্রিল থেকে বাজারে ভোজ্যতেল (পরিশোধিত পাম তেল এবং পরিশোধিত সয়াবিন তেল) ভ্যাট অব্যাহতি ছাড়াই আগের দামে সরবরাহ করা হবে। আজ (মঙ্গলবার) থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকায় বিক্রি হবে। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ৮৪৫ টাকায়।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close