নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩১। সবার মধ্যে ছিল পুরোনো বছরের দুঃখ গ্লানি ভুলে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। অন্ধকার কাটিয়ে নতুন বছর নিয়ে আসবে আলোর বার্তা, চাওয়া সাধারণ মানুষের। গতকাল রবিবার নতুন সূর্য ওঠার মধ্য দিয়ে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম প্রভাতে রমনার বটমূল থেকে গান, কবিতায় শুরু হয় বর্ষবরণ। তবে আয়োজন-উচ্ছ্বাস শুরু হয় আগের রাতেই।

সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পথের বাঁকে বাঁকে নিরাপত্তার আঁচ তৈরি করে। সকাল থেকেই রাজধানী শাহবাগ মোড়কে কেন্দ্র করে বাংলামোটর, মৎস্য ভবন মোড়, টিএসসি এবং কাঁটাবনের দিকে যাওয়ার প্রতিটি প্রধান সড়কের বাইরে পাশের রোডগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের মোতায়েন করে রাখা হয়। এর সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে।

রমনায় ঘুরতে আসা রাজধানীর বনশ্রীর তমা রহমান বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ঈদের ছুটিতে রাজধানী প্রায় ফাঁকা। ছেলে নিয়ে এলাম এখানে সময় কাটাতে। ভালোই লাগছে। আমার মতো এখানে অনেক মানুষ এসেছেন।

চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রা : বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বরাবরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। যাত্রা শুরুর আগে যথারীতি প্রথমে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে যাত্রা করে। শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব ও শিশু পার্কের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রার শুরুতে ছিল র‌্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এরপর অংশ নেয় ঢাকঢোল বাজানো একটি দল। তারপরে উৎসবপ্রেমীরা সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। সহযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য হাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন চিত্রশিল্পীরা। এসবের প্রদর্শনী দেখা গেছে শোভাযাত্রায়। উৎসবপ্রেমী ছেলেদের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। সঙ্গে ছিল কালো সানগ্লাস। অন্যদিকে মেয়েদের পরনে ছিল সাদা রঙের শাড়ি ও লাল রঙের ব্লাউজ। তাদের সঙ্গে যে শিশুরা এসেছিল তাদের বেশিরভাগের পরনেও দেখা গেছে পায়জামা-পাঞ্জাবি।

পুরান ঢাকায় হালখাতা উৎসব : বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন দেখা যায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মহলে। বৈশাখের প্রথম দিনে ‘লাল খাতায়’ চৈত্র সংক্রান্তি ও হালখাতা উৎসব পালন করে তারা। তবে রাজধানীর পুরান ঢাকায় কিছু ব্যবসায়ী পুরোনো এই ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখলেও হালখাতা উৎসবের জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক লেনদেনের কারণে ‘জানুয়ারি টু ডিসেম্বরে’ চলে গেছে ‘চৈত-কাবারি’ হিসাব।

পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর এলাকায় হালখাতা উৎসবকে ঘিরে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করানো হয়েছে। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। অনেকে আবার ক্রেতা-বিক্রেতার পুরোনো পাওনা চুকিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য দোকানে মিষ্টি এনে রেখেছেন। অনেক ব্যবসায়ী তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

মেসার্স ময়ূরী জুয়েলার্সের ব্যবসায়ী বিশাল নন্দী বলেন, এখন পর্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছেন, তারাই মূলত হালখাতা প্রথায় বিশ্বাসী। নতুন প্রজন্মের মানুষ এখন টালি খাতার পরিবর্তে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে হিসাব রাখেন। তাছাড়া আগের তুলনায় এখন বাকিতে বিক্রিও কমেছে। ফলে এখন আয়োজন করে হালখাতা করার প্রয়োজন হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close