বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় আগুনে ওষুধের ৩৯ গুদামে ক্ষতি
বগুড়া শহরে আগুনে ৩৯টি ওষুধের গোডাউন ও মার্কেটের লিফট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ওষুধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে শহরের সাতমাথার মেরিনা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের ছয়তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে শাজাহানপুর কাহালু, গাবতলী ও শেরপুরের চারটি ইউনিট যুক্ত হয়। পরে দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মূলত ষষ্ঠ তলায় ওষুধের ২০টি দোকান ছিল। অভি মেডিকেলের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানকার সকল মালামাল পুড়ে গেছে। এছাড়া অন্য ১৯টি দোকান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দশতলার ছাদে ১০/১২ জন ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের নিরাপদে নিচে নামিয়ে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন যেন দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে এবং বড় ধরনের ঝুঁকি ছিল বলেই আমরা আট ইউনিট মিলে কাজ করেছি। এর পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও কাজ করেছে। তবে কি কারণে আগুন লেগেছে এবং কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্তের পর বলা যাবে।’
অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত অভি মেডিকেলের মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘তার গোডিউনে থাকা ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আশপাশের দোকানের মালামাল পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। পরে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই।’ ক্ষতিগ্রস্ত অপর ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, ‘ষষ্ঠতলার আগুনে আমাদের সব মিলিয়ে দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সম্ভবত সিগারেটের থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কিন্তু আগুনের কারণে ৬ তলায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, আগুনের ভয়াবহতা কম ছিল। তবে ধোঁয়ার পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এছাড়াও মার্কেটে সিঁড়ি রয়েছে একটি। ফলে চলাচলেও সমস্যা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর এয়ার ব্লোয়ার দিয়ে ধোঁয়া বের করে দেওয়া হয়। মূলত এ কাজে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে অভি মেডিসিনের মালিক ও অন্য ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে আসেন। অভি মেডিসিনের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, মার্কেটে তার গোডাউন সবচেয়ে বড়। আগুনে তার গোডাউনের সব ওষুধ পুড়ে গেছে।
সাইদুরের ভাই মতিউর রহমান বলেন, ভাইয়ের গোডাউনের পাশে আমার ওষুধের গুদাম। এই গোডাউনেরও সব ওষুধ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে। এছাড়া আশপাশের অধিকাংশ গুদামের ওষুধ আগুনের তাপে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
মেরিনা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের ওষুধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ৩৮টি গোডাউনের ওষুধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভিজে মার্কেটের লিফট নষ্ট হয়ে গেছে। আরো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। প্রতিটি গোডাউনে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ওষুধ আছে। তিনি বলেন, মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেটি ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। আমরা ধারণা করছি- সিগারেটের আগুন থেকে এ ঘটেছে।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক ম?ঞ্জিল হক বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাজের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের থেকে ধোঁয়ার পরিমাণ বেশি ছিল। এজন্য সময় লেগেছে বেশি। পুরো ভবনটি আমরা ঘুরে দেখেছি। এখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। সিঁড়ি একটা ছিল। আগুনের সূত্রপাত তদন্তসাপেক্ষে বলা হবে।
"