বিজয় কুমার বিশ্বাস, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

জীবন সায়াহ্নে জ্ঞানস্পৃহা

কুমারখালী বয়স্ক বিদ্যালয়

‘যতদিন বাঁচব ততদিন শিখব’ কথাটি প্রমাণ করেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরাইকোল গ্রামের হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণকারী প্রত্যেকেই কর্মজীবী এবং বয়স্ক। শমসের আলী (৪৫) পেশায় একজন ভ্যানচালক। জ্ঞান অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই ৫৫ বছর পর তিনি হাতে জান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শুধু তিনি নন, তার মতো আরো অনেক কর্মজীবী মানুষ সারা দিন বিভিন্ন কাজ শেষে বিদ্যালয়ে আসেন। জীবন সায়াহ্নে তাদের জ্ঞানস্পৃহা।

প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আকমল হোসেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘আকমল হোসেন শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশনের’ আওতায় ৭টি শাখার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক বয়স্ক পুরুষ ও নারীর শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এরই মধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বয়স্ক এই বিদ্যালয়ে নিরক্ষর কর্মজীবী মানুষদের বাংলা, ইংরেজি, গণিতের পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাসহ কোরআন হাদিস থেকে শেখানো হয়। শিখছেন দস্তখতসহ প্রয়োজনীয় সব লেখা ও পড়া। গণনা থেকে শুরু করে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি এ বি সি ডির সঙ্গে সুরে সুরে উচ্চারিত হয় আরবি হরফ। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে শিখছে নারীরাও। পুরুষদের জন্য পুরুষ এবং নারীদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নারী শিক্ষক।

ছাত্রী রাবেয়া খাতুন (৮০) বলেন, এই বিদ্যালয়ের কল্যাণে এখন আমি সাত মাসে অনেক কিছু শিখেছি। আরেক শিক্ষার্থী জাহানারা বেগম (৬৫) জানান, আজ এই বয়সে এসে অ্যাডভোকেট আকমল সাহেবের স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়েছে। শিক্ষক নাইমা জান্নাত বলেন, তাদের এই বয়সে এসে শেখার তীব্র আগ্রহ দেখে আমি অবাক হই। হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, বর্তমানে এখানে প্রায় ৩৫০ জন বয়স্ক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করেন। বয়স্ক বিদ্যালয়ের পরিচালক অ্যাডভোকেট আকমল হোসেন বলেন, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নিরক্ষরতা দূরীকরণে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের দোরগোড়ায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতেই আমার এমন প্রচেষ্টা।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক বলেন, বয়স্কশিক্ষা প্রকল্পে সরকারের আলাদা নজরদারি রয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাম পর্যায়ে এমন শিক্ষার আলো যারা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাদেরও সাধুবাদ জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে আবেদনের সাপেক্ষে বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়ে শুধু বয়স্করা নন অর্থাভাবে স্কুলবঞ্চিত ঝরে পরা শিশুরাও বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়-পঙ্গু ও বিধবাদের মধ্যে মাসিক ভাতাও দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close