চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০২ মার্চ, ২০২৪

কারো চাপে মাথা নত করব না উচ্ছেদ চলবে

- চসিক মেয়র

কোনো পক্ষের চাপের কারণে চট্টগ্রামে চলমান ফুটপাত-রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার কার্যক্রম বন্ধ না করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার সকালে লালদিঘীরপাড়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলনকক্ষের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত চসিকের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৭তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।

চসিক মেয়র বলেন, নগরবাসীকে রাস্তায় নিরাপদে হাঁটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আমি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেই মাঠে নেমেছি। কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি-চাপ দিয়ে আমাকে থামানো যাবে না। কোনো চাপে আমি নত হব না, উচ্ছেদ অভিযান চলবে। হকাররা ব্যবসা করুক, আমার তো আপত্তি নেই। কিন্তু ফুটপাত দখল করে কেন হকার বসবে? হলিডে মার্কেট করে দেব, ওখানে শুক্র-শনিবার হকাররা ব্যবসা করুক। কিছু কুচক্রী মহল ছাড়া রাস্তা-ফুটপাত উদ্ধার হওয়ায় সবাই খুশি।

পিডিবির প্রতিনিধির উদ্দেশে মেয়র বলেন, অবৈধভাবে দোকান বসানো ব্যক্তিরা কীভাবে বিদ্যুতের লাইন পেল? আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতি মাসে কোটি টাকা বিল দিই। আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের দু-তিন মাস বিল বাকি থাকলে লাইন কেটে দেন। কোন বাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গেলে তো অনেক দলিল খোঁজেন। আমার প্রশ্ন ফুটপাত দখলকারীরা কীভাবে বিদ্যুতের লাইন পায়? অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুতের লাইন পেলে কেটে দেব, জেনারেটর পেলে জব্দ করব। ক’দিন আগে আগ্রাবাদে দেখলাম ঝুলন্ত তারের জঞ্জালে আগুন জ্বলছে। পিডিবির বিদ্যুতের পিলারে যাতে ডিশ-ইন্টারনেটের ক্যাবলের জঞ্জালে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ফুটপাত রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, ফুটপাত রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আমার তো কোনো ফোর্স নেই। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা যেখানে উচ্ছেদ করছি, সেখানে সংশ্লিষ্ট থানা একটু মনিটরিং করলেই তো ভয়ে আর কেউ বসবে না। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ৬ মাসের মধ্যে শহরের চেহারা বদলে যাবে। অপরাধও কমে যাবে। নিউমার্কেট মোড়ে দেখেন, অভিযান চালানোর পর ছিনতাই কমে গেছে। আপনাদের বলব, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যাতে আমাদের দমাতে না পারে।

মেয়র বলেন, ‘নিউমার্কেটে কী একটা বিশ্রী অবস্থা। অভিযান চালাতে গিয়ে দখলদারদের হামলায় আমার ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হয়েছেন। পুলিশ আহত হয়েছে। হামলাকারীদের প্রতি কোনো অনুকম্পা নেই। অনেকে বলে হকার পুনর্বাসন। জহুর হকার মার্কেট তো আমরাই করেছি। আমি তখন ছাত্রনেতা ছিলাম। হকার পুনর্বাসনে কোনো সুফল আসে না। পুনর্বাসন করবেন, এরা দোকানগুলো বিক্রি করে আবার রাস্তায় চলে আসবে। এখন আর বাজারে যেতে হয় না। পথে-ঘাটে সবখানে বাজার হয়ে গেছে এখন। অনেকে বলে ফুটপাতে গরিব মানুষ বসুক, ব্যবসা করুক। ফুটপাত দখলের কারণে মানুষ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কি কেউ নেন? আমাদের জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ নয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’

নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সব সংস্থার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, আমাদের নগরীর সৌন্দর্যের কথাও ভাবতে হবে। পিডিবির অনেক বিদ্যুতের খুঁটি নালায় পড়েছে যে কারণে জলাবদ্ধতা হয় এগুলো সরাতে হবে। রাস্তার মাঝখানে পড়ায় যানজট হয়। এগুলো সরাতে হবে। ওয়াসাকে অনুরোধ করব- পানির লাইনে লিকেজ হয়ে যাতে রাস্তা নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সিডিএকে বলব- জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণের অনুমতির ক্ষেত্রে চসিকের অনুমতি গ্রহণও বাধ্যতামূলক করলে কেউ ফুটপাত-রাস্তা দখল করে বাড়ি করতে পারবে না ফলে যানজট কমবে। নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে অনেক কার্যক্রম নিয়েছি। এখন কেউ যত্রতত্র ময়লা ফেললে কে ফেলেছে দেখব না, যার প্রতিষ্ঠান-বাসার সামনে ময়লা পাব তাকে জরিমানা করব।

সভায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সব ধরনের রিকশা বন্ধ করে সোলার চালিত গাড়ি চালু করার প্রস্তাব দেন। মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম নিউমার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযানকালে হামলার ঘটনায় মামলার কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান। সভায় ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের স্বার্থে নগরীজুড়ে জেব্রাক্রসিং গড়ে তুলতে হবে। নগরীতে যেসব নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর সামনে বিল্ডিং কোড অনুসারে জায়গা ছাড়া হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাটারিরিকশা বন্ধে সম্মিলিত পক্ষেপ দরকার।

পিডিবির প্রতিনিধি উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মুসা জানান, ব্যাটারিরিকশা এবং অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কমাতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পিডিবি। সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিরা তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close