বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ০২ মার্চ, ২০২৪

হাঁসের খামারে ভাগ্যবদল

তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জুটত না, অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি বেশিদূর। অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। কাজের আশায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। তারপরও হতাশ হননি। এরপর শুরু করেন হাঁসের খামার। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যশোরের শার্শা উপজেলার শরিফুল ইসলামকে। একটি খামারই জীবনের বাঁক বদলে দেয় তার।

উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ছোট কলোনির আলমপুর গ্রামের খোরশেদ আলম ও হনুফা খাতুন দম্পতির ছেলে শরিফুল। তিনি বলেন, বছর তিনেক আগে ১০টি হাঁস দিয়ে ছোট খামার শুরু করেন। অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও পরিচর্যা চালিয়ে যান খামারের। প্রতিটি ডিম ১৫ টাকা হিসেবে পাইকারি বিক্রি হয় জানিয়ে শরিফুল বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে তিন মাসে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আমাদের খামারের সব হাঁসই ‘ক্যাম্বেল’ জাতের। একটি হাঁস তিন মাস একাধারে ডিম দিয়ে থাকে। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়, তখন ওগুলো বিক্রি করে দিই। তবে সংসারের খরচ চালিয়ে খামারে হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারটি বড় করতে পারতাম।

প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে শরিফুলের হাঁসের খামার দেখতে আসেন, পরামর্শ নেন। এছাড়া তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুণ স্বল্প পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন বলে জানান শরিফুল। বর্তমানে শরিফুলের খামারে ২৫০টি হাঁস রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রতিটি হাঁস ৪৫০ টাকা দরে বরিশাল থেকে কেনেন। ­­২৪ বছর বয়সি এ যুবকের হাঁসের খামারটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে খামার ঘুরে দেখার পর মন ভেসে যায় তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে। মা-বাবার পাশাপাশি স্ত্রী রুনা পারভীনও তাকে এ পর্যায়ে আনতে সহায়তা করেছেন বলে জানান শরিফুল। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে হাঁস পালন করছি। নিজে না খেয়ে থাকলেও হাঁসগুলোকে দেখভাল করেছি সন্তানের মতো। আল্লাহ মুখ তুলেছেন, তাই অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে, পার করতে পেরেছি অভাবের দিনগুলো। বাড়ির পাশে ‘মাখলার বিলে’ সারা দিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন শরিফুল। হাঁস বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে মা আর স্ত্রীর ওপর। আর হাঁসের ওষুধ, খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখেন বাবা। এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ। কথা বলার একপর্যায়ে অতীত স্মরণ মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শরিফুল। বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না। ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এ খামার। নিজে তো পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই খামার থেকে যা আয় করি, তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।

শরিফুলের হাঁসের খামার সত্যিই ‘অনুকরণীয়’ বলছেন শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে সংসারের অভাব দূর করেছেন। তার এ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো অনেকে হাঁসের খামার তৈরি করছেন, এতে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে। শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, খাল-বিলে ভরা এ উপজেলায় হাঁস পালন ব্যাপক সম্ভাবনাময়। উপযোগী পরিবেশের কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকেও হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি। হাঁস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং বিপণনব্যবস্থা ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close