ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিবকে কাঁদিয়ে ফাইনালে তামিম
বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ রংপুর রাইডার্স বনাম ফরচুন বরিশাল। দলীয় এই লড়াই ছাপিয়ে শেরেবাংলার ২৫ হাজারের বেশি দর্শকের চোখ ছিল দেশের ক্রিকেটের বড় দুই তারকা সাকিব ও তামিমের ব্যক্তিগত দ্বৈরথে। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন দুজনেই। জমেনি তামিম-ফারুকির লড়াইও তবে ফাইনালের টিকিট পেল ফরচুন বরিশাল। সাকিবকে বিদায় করে ফাইনালে কুমিল্লার সঙ্গী হল তামিম ইকবালের দল। ম্যাচটি সবচেয়ে বিভীষিকাময় ছিল রংপুরের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানের জন্য।
২০২৪ বিপিএলে অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছিল রংপুর রাইডার্সকে। দলে শক্তি, সামর্থ্য কিংবা তারকার অভাবও ছিল না। কিন্তু সেই দলটিই এবার অঘটনের শিকার হয়ে বিপিএলের প্লে-অফ থেকে বিদায় নিয়েছে। ৯ বল বাকি থাকতেই রংপুরকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। ১৫০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ফজল হক ফারুকির প্রথম ওভারে স্ট্রাইকেই যাননি নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবাল। ফারুকি জুজু কাটাতে এদিন মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ইনিংসের শুরু। পুরো ওভার খেলে মিরাজ রান করেন ৩। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অবশ্য আর ফারুকিকে মোকাবিলা না করে থাকতে পারেননি তামিম, দুই বল ডট খেলে তামিম পেয়েছেন রানের দেখা। ফারুকি এই ওভারে খরচ করেন কেবল ৩। কিন্তু তামিম ইকবাল উইকেট হারিয়েছেন আবু হায়দার রনির বলে। রনি নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই বিদায় করেন বরিশালের দুই ওপেনারকে।
বরিশালের ইনিংসের শুরুটা অনেকটা রংপুরের মতোই হয়েছে। স্কোর বোর্ডে ২২ রান আসতেই নেই দুই ওপেনার। এরপর অবশ্য দুই নতুন ব্যাটার মুশফিক-সৌম্যর ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বরিশাল। তারা কেবল দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেননি রানের চাকায়ও এনে দিয়েছেন গতি। ইনিংসের ১০তম ওভারে মোহাম্মদ নবী এসে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু এনে দেন রংপুরকে। ২২ রানে থাকা সৌম্য এগিয়ে এসে হয়েছেন স্টাম্পড। আর তাতেই ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে গড়া ৪৭ রানের জুটি।
এরপর কাইল মায়ের্স উইকেটে এসেই চালান তাণ্ডব। চার-ছক্কার বন্যাই ভাসিয়ে দেন রংপুরের বোলিং লাইনকে। মায়ের্স সবচেয়ে বেশি রান খরচ করান শেখ মেহেদীকে। ১৪তম ওভারে এসে মেহেদী দেন ১৮ রান। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ২৭ বলে এই জুটির যখন ৫০ রান, তখন মায়ের্সের ঝড় থামিয়ে দেন ফজল হক ফারুকি। তবে বোলারের চেয়ে বেশি অবদান ছিল ডিপ মিডউইকেটে মিলেমিশে ক্যাচ লুফে নেওয়া হাসান মাহমুদ ও রনি তালুকদারের। মায়ের্সের ব্যাট থেকে ২৮ রান আসে কেবল ১৫ বলে, ৩ ছক্কার হাঁকানোর দিনে বাউন্ডারি কেবল একটি।
ডেভিড মিলার এসে এরপর দারুণভাবে সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিমকে। এই দুইয়ের ব্যাটে চড়েই বরিশাল পায় ৬ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৪৭ রানে। ডেভিড মিলার ১৮ বলে ২২ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এদিন হোম অব ক্রিকেটের সন্ধ্যার রঙিন আলোটা নিজের করে নিয়েছেন। প্রথম ডেলিভারিতেই ফেরান ওপেনার শেখ মেহেদীকে, ওভারের শেষ বলে সাইফউদ্দিনের শিকার রংপুরের ‘বিগ ফিশ’ সাকিব আল হাসান। এরপর একে একে হারায় ৭ উইকেট। ধুঁকতে থাকা রংপুরকে অবশ্য শেষ বেলায় স্বস্তি এনে দেয় শামীম পাটোয়ারী। তার অনবদ্য ফিনিশিংয়ে রংপুর পায় ১৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। ২০ বলে ঝড়ো ফিফটি পাওয়া শামীম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৯ রানে।
৭৭ রানে ৭ উইকেট হারানো দলকে একা হাতে টেনে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যান শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ফিনিশিংয়ে শামীম দেখালেন দাপট। মাত্র ২০ বলে ছুঁয়েছেন ৫০ রানের মাইলফলক। এক শামীমের তাণ্ডবে দিশাহারা হয়ে ১৯তম ওভারে ওবেদ ম্যাককয় খরচ করে যান ২৬ রান। শামীমকে এদিন অবশ্য যোগ্য সঙ্গ দেন আবু হায়দার রনি। মাত্র ২৪ বল খেলা শামীম সমান ৫ চার ও ছক্কায় মাঠ ছাড়েন নামের পাশে ৫৯ রান নিয়ে। তার ক্যামিওতেই রংপুরের হয় রক্ষা।
"