দিলওয়ার হাসান, অনুবাদক ও গল্পকার
লেখকের কথা
বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে
বইমেলাকে বলা হয় প্রাণের মেলা। প্রাণের মেলাই বটে। সেজেগুজে বিকেল-সন্ধ্যায় যুবক-যুবতীরা মেলায় ঢোকে, এন্তার সেলফি আর ছবি তোলে বই হাতে নিয়ে, ফুসকা, চীনাবাদাম আর মেলার বাইরে পিঠাপুলি খেয়ে একটুখানি প্রেম-ভালোবাসা গায়ে মেখে বাড়ি ফিরে যায়। অনেকে ঢোকার আগে ফুলটুল কেনে, ফুলের টোর মাথায় দেয়, কিন্তু কেউ তেমন বই কেনে না।
অনেকে আবার মুরগি হয়ে বই প্রকাশ করে মোড়ক উন্মোচনের হুল্লোড় করে, যে-বই এত ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশ পেল, তা পড়া যায় না, তা সাহিত্য পদবাচ্য নয়। সময়, অর্থ আর কাগজ-কালির এত বড় অপচয় কমই আছে। বাংলা একাডেমির ‘আমি লেখক বলছি’র হাটে কোনো এক লেখক তার স্বরে চিৎকার করে শব্দদূষণ করে চলেন, তার সামনে স্রোতা ছয়জন, দুজন আবার একাডেমির কর্মকর্তা।
এ বছরের মেলা গত বছরের তুলনায় খানিকটা খোলামেলা, ধুলো কম, তবে অনেক জায়গাতেই ময়লা কাগজের স্তূপ। অনেক স্টল আর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে হলো। ওগুলো বেশ রংবাহারি, বোঝাই যায় বিস্তর অর্থকড়ি খরচ করা হয়েছে।
আগের মতো এ বছরও আনুমানিক হাজার-চারেক বই বেরোবে; কিন্তু পড়ার মতো বা কেনার মতো থাকবে হয়তো শ-খানেক; তাহলে কী লাভ হলো মাসব্যাপী মেলা করে? প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক হাজার-তিনেক লোক মেলার মাঠে ঢোকে; লোকের হাতে, তাদের বোঁচকা ব্যাগে অনেক কিছুই থাকে- শুধু বই থাকে না! তাহলে?
মেলার সময় পনেরো দিনে নামিয়ে আনা যেতে পারে। স্কুল, কলেজের লাইব্রেরিতে মরচে ধরা তালাগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিতে হবে, বইয়ের জন্য স্কুলে আবার চালু করতে হবে ‘লাইব্রেরি ক্লাস’। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বই পড়ার ওপর বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে, তারা বইও প্রকাশ করবে। পাঠাভ্যাস না বাড়াতে পারলে বইমেলা করে শুধু বই বিপণনের ব্যবস্থা করলে কোনো ফলোদয় হবে বলে মনে হয় না।
"