রুমা মোদক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

লেখকের কথা

সত্যিকারের পাঠক লেখকের হাতে আসুক

বইমেলা- বইকেন্দ্রিক মেলা। লেখক ও পাঠকের মেলা। এই মেলা সম্মিলন অর্থে মেলা বলে আমি মনে করি না, বৈশাখী মেলা বা পৌষ মেলার মতো। কিন্তু এই মেলায় এখন পাঠকের চেয়ে দর্শকের সংখ্যা, দর্শকও নয় ঠিক, আড্ডাবাজের সংখ্যা বেশি। এরা যায়, বেড়ায় ঘুরে, বই হাতে নিয়ে, মাথায় ফুল দিয়ে ছবি তুলে, তারপর বই না কিনে চলে আসে। কেউ কিনতে হয় নইলে কেমন দেখায় বলে, যা সামনে পায় তাই একটা কিনে আর কী। চকচকে মলাট, ঝকঝকে কাগজ অথবা চটকদার নাম। প্রকৃত পাঠকরা এখন সযত্নে মেলা এড়িয়ে চলেন বলে মনে হয়। অথচ আমি নব্বইয়ের দশকে দেখেছি মানুষ মেলায় গিয়ে হাত ভর্তি বই নিয়ে বের হয়।

মানুষ কি মেলায় যাবে না? নিশ্চয়ই যাবে। সেই সঙ্গে মেলার কাছে প্রত্যাশা- সে পাঠকের জন্ম দেবে। সেটা কীভাবে- যদি জিজ্ঞেস করেন তবে আমি বলব, লেখকের চেয়ে প্রকাশকের দায়িত্ব এখানে অনেক বেশি। প্রকাশক ভালো বইকে প্রমোট করবেন। যেনতেন বই টাকার বিনিময়ে ছাপবেন না। প্রকাশক বই প্রকাশকে কেবল বাণিজ্য হিসেবে দেখবেন না, তার ন্যূনতম নীতিবোধ থাকবে।

প্রকাশকরা সিরিয়াস লেখকদের আত্মসম্মানে ধস নামিয়ে দেন। তারা সব সময় বলেন, বই বিক্রি হয় না। তিনি প্রকাশের আগে জানতেন নিশ্চয়ই, লেখক কোন ধারার লেখক, তার বই সর্বোচ্চ কত কপি বিক্রি হতে পারে! শুধু ব্যবসা মাথায় থাকলে, জনপ্রিয় ধারার বই-ই তো প্রকাশ করা উচিত।

সবারই বই লেখার প্রকাশের অধিকার আছে। পাঠকই ঠিক করবে কী পড়বে, কী নয়। এই যে বই নিষিদ্ধ করা, অমুক-তমুককে বইমেলা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, এগুলো খুব বাজে চর্চা। মুক্তচিন্তার বিকাশের জন্য বই। অথচ এই কাজগুলো মুক্তচিন্তা বিরোধী। কোনোভাবেই এটা সমর্থন যোগ্য নয়।

আমি নব্বই দশকের মেলা খুব মিস করি। যখন মানুষ শুধু একটু ঘুরে আসার জন্য মেলায় আসত না। বইকে ভালোবেসে আসত। ঘুরে ঘুরে নতুন প্রকাশিত বইয়ের তালিকা করত এবং সবশেষে বই কিনে বাড়ি ফিরত। প্রকাশের ক্ষেত্র প্রসারিত হলেও, পাঠক কিংবা বই কেনার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়নি।

এখন মেলার মূল বিক্রি সত্যিকার পাঠকের হাতে নয়; বরং পরিচিত বন্ধু স্বজন, অধস্তন কর্মচারি, চক্ষুলজ্জার পরিচিত জনদের হাতে। আমি চাই, প্রাণের বইমেলা সত্যিকারের পাঠক-লেখকের হাতে আসুক। আর এই যে এত লেখক এত বই, এতে মূলধারার সাহিত্যিকদের খুব ভাবিত হওয়ার কিছু দেখি না। লেখালেখি দীর্ঘ সাধনার, দীর্ঘ পথ যাত্রা। সত্যিকারের লেখক লিখবেন। সুদীর্ঘ পথ হাঁটবেন। অন্যরা আসবে-যাবে। সময় বলবে কে লেখক, আর কে লেখক নন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close