সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বালু ভরাট, আধিপত্য বিস্তার

সোনারগাঁয়ে ১০ বছরে ৪ খুন, আহত অর্ধশতাধিক

নারায়ণগঞ্জের পিরোজপুর ইউনিয়ন

বালু ভরাট ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁয়ে গত ১০ বছরে চারজন খুন হয়েছেন, শিশুসহ আরো অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। ঘটেছে একাধিক সহিংস সংঘর্ষ। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ কান্দারগাঁ এলাকায় চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ জুমা আধিপত্য বিস্তার ও রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন গ্রুপের সঙ্গে একই এলাকার বজলু মিয়া গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পারভেজ (৩০) নামে এক যুবক নিহত হন। পারভেজ কান্দারগাঁ এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের মধ্যে লিটন মিয়া, জাকারিয়া, রুহুল আমিন, আক্তার হোসেন, হৃদয় হোসেন, মোতালেব মিয়া, জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, শামীম সরকার ও আলম সরকার আহত হন। এদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর নিহতের ছোট ভাই মো. হৃদয় মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। হত্যা মামলায় জসিম উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ৪৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় কান্দারগাঁ পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের লোকজন টেঁটা, বল্লম, রামদা, চাকু, ছোড়াসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এর আগে ২০১২ সালের ৭ জুন প্রথমে খুন হয় যুবলীগ নেতা রিপন। নিহত যুবলীগ নেতা রিপন কান্দারগাঁ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাফ্ফর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহত রিপনের বাবা মুজাফ্ফর আলী বাদী হয়ে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকান্ডে জড়িত ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুই জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। জাকির হোসেন একই এলাকার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে।

এরপর ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে সাধন নামে এক যুবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সাধন একই এলাকার ফয়জুল হকের ছেলে। পরের দিন নিহত সাধনের মা জয়তুন নেছা বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি সোনারগাঁ রিসোর্ট আবাসন প্রকল্পে বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয় সাধন হত্যা মামলার আসামি মোহাম্মদ আলী। নিহত মোহাম্মদ আলী উপজেলার সাহাপুর এলাকার মৃত আরজান আলীর ছেলে।

সর্বশেষ কোম্পানির বালু ভরাট ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ জুমা খুন হয়েছে পারভেজ নামে এক যুবক। নিহত পারভেজ কান্দারগাঁ এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে।

অন্যদিকে, সাধন হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। সোনারগাঁ থানা পুলিশ মামলার তদন্তে গড়িমসি করায় মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবিতে) স্থানান্তর করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক দাদন ফকির মামলাটির পুনরায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেস। তদন্তে মুঠোফোনের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার হয় সাধনের দুই বন্ধু শামীম ও আল আমিনকে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে রাসেল ও মোহাম্মদ আলী নামে আরো দুজনের সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়। ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত মোহাম্মদ আলী মায়ের সঙ্গে তার মামা পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের বাড়িতে বসবাস করতেন।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, পারভেজ হত্যাকান্ডে মামলা হয়েছে। অপরাধ না করে কোনো ব্যক্তি এজহারে অন্তর্ভুক্ত হলে তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close