বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জটিলতায় আটকে আছে ভারত থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি

রমজানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ছোলা, পেঁয়াজ ও তেলসহ আটটি নিত্য খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ ও শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ অংশে কিছুটা জটিলতা ও ভারত অংশে খাদ্যদ্রব্যের ওপর নানা শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন ধরে বহাল থাকায় সরকারের এ সুযোগ সবক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারছেন না আমদানিকারকরা। বৈশ্বিক মন্দা এবং বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে প্রতিদিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম।

এদিকে ভারত চিনি, পেঁয়াজ, চালের ওপর থেকে রপ্তানি শুল্ককর কমাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেশি দামে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করতে হবে। ভারতের কঠিন শর্তে চলতি অর্থবছরের ৬ মাস ও তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৬ মাসের তুলনায় আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ টন। তবে বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিয়েছেন, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি সহজ হলে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসবে।

বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক মন্দা আর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিদিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আর এ অবস্থার মধ্যে আগামী মাসে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। তবে এ সময় নিম্নআয়ের মানুষ যাতে কমমূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারেন এতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ীদের বাকিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৮টি খাদ্যদ্রব্য আমদানির সুযোগ। এগুলো হচ্ছে খেজুর, চিনি, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল, মটর ও মসলা জাতীয় খাদ্য।

এ ছাড়া চাল, পেঁয়াজ, চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খেজুর, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের আমাদনি শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে খেজুরের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ; যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির ওপরে এত দিন আমদানি শুল্ক ছিল তিন হাজার টাকা। সেটি কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া চালের ওপর আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ; যা এত দিন ছিল ২৫ শতাংশ। আর পামঅয়েলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের জন্য প্রায় তিন লাখ টন ভোজ্যতেল, দুই লাখ টন চিনি এবং এক লাখ টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। এদিকে সরকারি নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে না আসায় অনেক আমদানিকারকরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন।

এ ছাড়া ভারত অংশে খাদ্যদ্রব্যের ওপর নানা শর্ত বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল রয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। খাদ্যদ্রব্য আমদানিকারক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, আমরা চাহিদামতো খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে না পারায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে এ সংকট কাটবে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দ্রব্যমূল্যের বাজার স্বাভাবিক করতে আমদানি বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা কাটাতে সরকারকে দ্রুত ভূমিকা নিতে হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভারতের সঙ্গে বছরে ১৪ লাখ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও দুই লাখ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য হয়। ভারত পাশে থাকলে দেশে খাদ্যদ্রব্যের যেকোনো সংকট কাটানো সহজ হবে। বেনাপোল আমদানি রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, ২০২২ সালের ২০ জুলাই দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। একই বছরের ১৩ মে থেকে দেশটি গমের এলসি নিচ্ছে না, গত বছরের ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ এবং রপ্তানি মূল্য ১৫০ ডলার থেকে ৮৫০ ডলারে বৃদ্ধি করায় সেই থেকে পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ রয়েছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি মিলস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অভিযোগ দায়েরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমদানির সুযোগ পেলে এসব পণ্যের দাম কমবে বাজারে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নিত্যপণ্য আমদানিতে সরকারের নির্দেশনা না পৌঁছানোয় ব্যবসায়ীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন।

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, অনেক দিন ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল, চিনি, রসুন, আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। এদিকে আমদানিতে ভারতের কঠিন শর্ত আর নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দরে খাদ্যদ্রব্যের আমদানি কমেছে এক লাখ ৬১ হাজার ১০৪ টন। খাদ্য সংকটে মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে পেঁয়াজ দেশীয় খুচরা বাজারে কেজি ১১০ টাকা, চিনি ১৫০ টাকা, গম ৫০ টাকা, রসুন ২৫০ টাকা ও প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close