জাহিদুল হাসান, জবি

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শিশুপ্রহরে আনন্দে মাতোয়ারা ওরা

মেলার দশম দিন

জমে উঠেছে অমর একুশে বইমেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় যেন আরো বেশি মুখর হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গণ। বইমেলার শুক্র ও শনিবারের সকাল যেন অন্যরকম শুরু। এই দুদিন সকাল মানেই শিশুপ্রহর। এই দিন শিশু চত্বরে থাকে ছোটদের জন্য বিশেষ আয়োজন। জনপ্রিয় শিশুতোষ চরিত্র সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম, ইকরি ও শিকুর সঙ্গে নাচে-গানে আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ মেলে। বইপ্রেমীদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় সামনের দিনগুলোয় কেনাবেচা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

গতকাল শনিবার একুশে বইমেলার চতুর্থ শিশুপ্রহর এবং মেলার দশম দিন। এই ছুটির দিনে সকাল থেকেই বইপ্রেমীদের ভিড়, হইহুল্লোড়, তরুণ-তরুণীদের ছুটে চলা, ছবি-সেলফিতে জমজমাট হয়ে ওঠে বইমেলা।

শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের আয়োজন শেষে শিশুরা ভিড় জমায় শিশুতোষ বইয়ের স্টলগুলোয়। আনন্দ-উল্লাস আর খুনসুটিতে মেতে থাকলেও, বই থেকে দূরে থাকে না কোনো শিশুই। বাহারি ছবি সংবলিত নতুন বইয়ের রঙিন প্রচ্ছদ মন কাড়ে তাদের।

যাত্রাবাড়ী থেকে সাত বছরের সন্তান রাফসানকে নিয়ে গ্রন্থমেলায় আসা নওশীন আক্তার বলেন, ছেলে অনেক দিন ধরে বলছে মেলায় আসবে, তাই মেলায় ছেলেকে নিয়ে আসলাম। নিজের পছন্দমতো কিছু বইও কিনেছে। ছেলেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলছে কার্টুন জাতীয় কিছু বই কিনে দিতে। এসেই কিছু ছড়া আর কার্টুনের বই কিনে দিয়েছি।

মেলায় ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে আসা রুবেল জানান, মেলায় শিশুদের প্রধান আকর্ষণ সিসিমপুর। প্রিয় ইকরি, হালুম, শিকু, টুকটুকিদের দেখতে শিশুদের আগ্রহের অন্ত নেই। তাই সিসিমপুর দেখতে সকাল বেলায় ছেলেকে নিয়ে শিশুপ্রহরে চলে এসেছি। এসে দেখি অনেক ভিড়। প্রিয় হালুম, ইকরি, টুকটুকিদের দেখে আনন্দে আত্মহারা ছেলে। নেচে গেয়ে নিজেদের বাঁধভাঙা আনন্দ প্রকাশ করে সে।

ছয় বছর বয়সি মেয়ে আফরোজাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন নাহিদা। নাহিদা বলেন, ছুটির দিন থাকায় মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় এসেছি। নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করে দিতে ওকে মেলায় নিয়ে এসেছি। শিশু প্রহরে এসে দেখি ভালোই ভিড় রয়েছে। মেয়েকে কবিতার বই কিনে দিয়েছি, আর কয়েকটা কার্টুনের চিত্র সংবলিত বইও কিনে দিয়েছি।

পুরান ঢাকা থেকে আসা প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া ফারিয়া মায়ের হাত ধরে বইমেলার শিশু কর্নারে ঘুরছে। বই দেখার ফাঁকে কখনো মায়ের হাত ছেড়ে দৌড় দিচ্ছে তো ছুটছেন মা মেয়ের পিছু পিছু। ফারিয়ার মতো অনেক শিশুর পদচারণায় এভাবে মুখর অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশুপ্রহর।

কথা হয় শিশুতোষ প্রকাশনা আদিগন্ত প্রকাশনের ফারজানা কাইয়ুমের সঙ্গে তিনি বলেন, ছুটির দিন মেলায় বই বিক্রি আগের থেকে বেড়েছে। তবে খুব বেশি যে বেড়েছে তা নয়, তবে গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। শিশুদের বই সকালে একটু বেশি বিক্রি হয়েছে, বিকালেও মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।

অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, এ বছর মেলা মেট্রোরেলের জন্য বেশ জমবে। করোনার কারণে দুই বছর মেলা এলোমেলো ছিল। গত বছর কাগজের দাম বাড়ার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে এ বছর সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ইতিবাচক।

অভিভাবকরা বলছেন, বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তারা সন্তানদের নিয়ে এসেছেন এই মেলায়। শুধু বইমেলায় নয় বছরের অন্য দিনগুলোয় যেন শিশুদের জন্য প্রস্তুত করা হয় এমন সুন্দর আয়োজনের। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বাবা-মায়ের হাত ধরে হাসতে-খেলতে কোমলমতি শিশুরা আজ যে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করল, তা অব্যাহত থাকুক সারা জীবন।

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ছুটির দিনে মেলার শিশুপ্রহরে শিশু-কিশোররা এসেছে বাবা-মায়ের হাত ধরে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার শিশুতোষ বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন মেলায় বই বিক্রি হয় বেশি। এদিন অনেক শিশু আসে মেলায়। অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিনগুলোয় বই বিক্রিও হয় বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close