রঙিন ফুলকপি চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন টাঙ্গাইলের সদরের কৃষক শহিদুল ইসলাম। সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এ সফলতা এসেছে। সদরে রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়টি নতুন হওয়ায় আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন শহিদুলের খেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নিয়োগী জোয়াইর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। শুধু শহিদুল ইসলাম নয় তার মতো জেলায় আরো ১১ জন কৃষক সফল হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় সদরে চলতি বছর শীত মৌসুমে রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই প্রকল্প থেকে জেলায় ১২টি উপজেলার চাষিদের পরীক্ষামূলকভাবে ২৪ হাজার রঙিন ফুলকপির চারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার হলুদ ও ১২ হাজার বেগুনি রঙের। ১২টি উপজেলায় ৬ বিঘা জমিতে রঙিন ফুল কপির চাষ করা হয়েছে।

চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৫ শতাংশ জমিতে ২ হাজার রঙিন ফুল কপির চারা রোপণ করি। দুই থেকে আড়াই মাসের মাথায় ফুলকপি এসেছে। এতে রঙিন ফুলকপি চাষে আমার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারব।

সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ শহিদুলের ফুলকপি খেত দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। অনেকে বাগান থেকেই কপি কিনে নিচ্ছেন।

রঙিন ফুলকপি খেত দেখতে আসা সদর উপজেলার সুরুজ গ্রামের আকবর আলী বলেন, আমারও ইচ্ছা আছে রঙিন ফুলকপি চাষ করার। এ জন্য সামনাসামনি দেখতে আসছি। ফুলকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে। এর চাহিদাও দ্বিগুণ। খেতেও অনেক সুস্বাদু। কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে সহযোগিতা করলে আমিও আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ করব।

জেলার গোপালপুর উপজেলার চাষি রিপন মিয়া বলেন, রঙিন ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে দুই কেজি। এতে এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারবেন।

ধনবাড়ী উপজেলারর মুশুদ্দি গ্রামের চাষি মিজানুর রহমান শিবলী মিয়া ও ইদ্রিস আলী বলেন, ১৫ শতক জমিতে বিদেশি জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। খেত থেকেই পাইকারা উচ্চ মূল্য দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে অধিক জমিতে চাষ করব। দাম ভালো থাকায় অন্য কৃষকদের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের সুরুজ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, এ এলাকার মানুষ আগে কখনো রঙিন ফুলকপি চাষ করেননি। তাই উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এ সবজি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ আসছেন। এমনকি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করে গেছেন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুমানা আকতার বলেন, কৃষকের মধ্যে কৃষিবিষয়ক নতুন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলায় একমাত্র শহিদুল ইসলামকে এবার রঙিন কপি চাষে সহযোগিতা করা হয়েছে। শহিদুল সফল হওয়ায় আগামী বছর রঙিন ফুলকপির চাষির সংখ্যা আরো বাড়বে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক দুলাল উদ্দিন বলেন, রঙিন ফুলকপি দেখে মানুষের পছন্দ হয়েছে এবং খেতেও সুস্বাদু। বাজারে দামও অনেক ভালো সেজন্য কৃষকরা বেশি আগ্রহী। ক্রেতারা রঙিন ফুলকপি আগ্রহ নিয়ে কিনছে।

"