আশিকুর রহমান শুভ, ঢাবি
টুকটুকি, হালুম দেখতে শিশুরা মুখর
মেলার নবম দিন
ছুটির দিনে টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুরা মা-বাবার হাত ধরে মেলায় আসে। সিসিমপুর দেখে তারা খুব মজা পায়। শিশুদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তাদের প্রাণচাঞ্চল্য উপস্থিতিতে মেলা যেন প্রাণ ফিরে পায়।
মা-বাবার সঙ্গে বইমেলায় আসা ১০ বছরের মর্ম শিশুপ্রহরে এসে খুবই আনন্দিত। শুধু মর্ম নয়, গতকাল সকালে শিশুরা ছিল মুখর। বইমেলা শুরুর প্রথম ছুটির দিন বেশ প্রাণবন্তই ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। শিশুপ্রহর থাকায় বেলা ১১টায় মেলার দরজা খোলার পর থেকে মানুষের আগমন বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে মানুষের ঢল নামতে থাকে। গতকাল আলাদা নজর কেড়েছে শিশুতোষবিষয়ক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর। রমনা কালীমন্দিরের পাশে অবস্থিত শিশুচত্বরে সোনামণিদের ছোটাছুটি মেলাকে করে আরো প্রাণবন্ত। শুক্র ও শনিবার অভিভাবকরা শিশু-কিশোরদের মেলায় নিয়ে আসেন। এই দুদিন বিক্রিও অন্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়া গতকাল লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের আনাগোনায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। শুধু নিজে নন, পরিবার-পরিজন, ছোট্ট শিশুদের নিয়েও সবাই বইমেলায় আসছেন। বই কেনার পাশাপাশি চলছে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো। বইপ্রেমীরা মেলা ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন স্টলগুলোয়। বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শুরু থেকেই পাঠকদের আনাগোনা থাকলেও ছুটির দিনগুলোয় ভিড় বেশি থাকে। তবে সামনের দিনগুলোয় আরো বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঠক-দর্শনার্থীরা বইমেলাতে প্রবেশ করেই ভিড় জমাচ্ছে বইয়ের স্টলগুলোয়। প্রতিটি স্টলে বইপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে। কেউ কিনছে, কেউ আরো কিছুটা সময় মেলায় কাটিয়ে ফেরার পথে কিনবে বলে বই বাছাই করে রাখছে। কেউ কেউ আবার পরদিন আসবে বলেও বই বাছাই করে রাখছে। দেখা যায়, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, ঐতিহ্য, বাতিঘর, অ্যাডর্ন, বেঙ্গল পাবলিশার্স, মাওলা ব্রাদার্স, প্রথমা, জিনিয়াস পাবলিকেশন্সসহ বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে পাঠকের আনাগোনা ছিল বেশি।
ছুটির দিনে আজিমপুর থেকে পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনুপম আকাশ। তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় পুরো পরিবার নিয়ে এলাম বই মেলায় ঘুরতে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে আজ বই দেখছি। পছন্দের বইগুলো লিস্ট করে রাখছি, আগামীতে কিনব। বিভিন্ন স্টল ঘুরে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অন্যবারের তুলনায় মেলায় এবার জনসমাগম বেশ ভালো। আর ছুটির দিন হওয়ার সকালের তুলনায় বিকেলে বইপ্রেমীদের ভিড় বেশি। বইপ্রেমীরা আসছেন, বই দেখছেন। সংখ্যায় কম হলেও বই কিনছেন অনেকেই।
জিনিয়াস পাবলিকেশন্সের প্রকাশক বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বইপ্রেমীদের সমাগম বেশি। আর আজকে ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় পাঠকদের ভিড় সামাল দিতে আমাদের ঘাম ছুটছে। কিন্তু বেচাকেনা বাড়ায় আমরা খুশি। তবে সামনের দিনগুলোয় বিক্রি আরো বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করি।
মেলায় বই কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শান্ত আলম। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ভালোবাসা আর প্রাণের টানে আমরা প্রতি বছরই বইমেলায় ছুটে আসি পছন্দসই বই কিনতে। আমি মূলত হুমায়ুন স্যারের ভক্ত। তার বই-ই বেশি পড়ি। তবে নতুন লেখকদের অনেক বই এসেছে, সেগুলো দেখছি। ভালো লাগলে কিনব। মেলায় ভিড় ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, মেলায় ভিড় বেশি। তবু ভালো লাগছে, আসতে পেরে। আর পর্যাপ্ত পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে নিশ্চিতে ঘুরে বেড়ানো যায় বইমেলায়।
"