টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ব্যান্ড দল বিটিএসের টানে ঘরছাড়া তিন কিশোরী

দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড দলের টানে রাজধানীর মেরাদিয়ার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজের ১০ দিন পর তিন কিশোরীর সন্ধান মিলেছে গাজীপুরের টঙ্গীতে। গত বৃহস্পতিবার রাতে খিলগাঁও থানা পুলিশ টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় সন্ধান পায় এবং হেফাজতে নেয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তারা হলো- রুবিনা আক্তার মিম (১৩), রিজুয়ানা রিজু (১৪) ও বর্ষা আক্তার (১৪)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খিলগাঁও থানার ওসি সালাউদ্দিন।

তিনি বলেন, অভিযোগের পর সাইবার নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসায় তাদের সন্ধান মিলে এবং পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।

ওসি বলেন, এঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তিন কিশোরীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা নিজেরাই ঘর ছেড়েছিল। তিনি বলেন, ওই তিন কিশোরী খুবই দুরন্ত প্রকৃতির। ঘটনার দিন তারা ঢাকা থেকে গাজীপুরে চলে যায়। একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করে। শুধু তাই নয় কোরিয়ানদের মতো ফিটনেস অর্জনের উদ্দেশ্যে জিমেও ভর্তি হয়। ইন্টারনেট দেখে কোরিয়ানরা কীভাবে খায়, কি খায়, দেশটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে এসব শেখার চেষ্টা করছিল এ তিন কিশোরী। তাদের পরিকল্পনা ছিল গার্মেন্টসে চাকরি করে যে টাকা পাবে তা দিয়ে কোরিয়ার বিটিএস ব্যান্ড দলের সদস্যদের কাছে চলে যাবে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিস্তারিত জানার জন্য তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের মা-বাবাসহ স্বজনদের সামনেই জিজ্ঞাসাবাদ করব আমরা। এসবের পেছনে অন্য আর কোনো কারণ রয়েছে কি না- তখন হয়তো সেগুলো জানা যাবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ রুবিনা ও বর্ষা মেরাদিয়ায় আলাদা দুটি মাদরাসায় পড়তো, আর রিজুয়ানা পড়তো বনশ্রীর একটি স্কুলে। তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেত। সেখান থেকে ফিরে তিন বান্ধবী একে অপরের বাসায় একসঙ্গে সময় কাটাতো। এসময় রিজুয়ানার হাতে দেখা যেত তার মায়ের স্মার্ট ফোনটি। বাড়ির মধ্যেই তিন বন্ধুর একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করে খতিয়ে দেখেনি অভিভাবকরাও। বাসা ছেড়ে যাওয়ার আগে রিজুয়ানা রিজু তার মাকে চিঠি লিখে যায়। চিঠিটিতে সে লেখে, ‘মা, আমাকে মাফ করে দাও। আমি বিটিএসের কাছে যাচ্ছি। সাউথ কোরিয়া যাব। আর আমি গেলে তোমাদের তো খুব ভালো হবে তাই না! আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবে না। আমি বিটিএসের একজন মেম্বারকে বিয়ে করব। আমি একা না আমার সঙ্গে আরো তিনজন আছে। তোমরা আমার কোনো শখ পূরণ করো না। ভালো লাগে না, এ জন্য আমি ঘর ছেড়ে গেলাম।

সন্তানদের না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে মা-বাবা ও স্বজনরা। না পেয়ে ওদিনই (২৯ জানুয়ারি) খিলগাঁও মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নিখোঁজ রুবিনার বাবা মো. রুবেল মিয়া। জিডিতে তিনি রুবিনার সঙ্গে তার দুই বান্ধবীর নিখোঁজের কথাও উল্লেখ করেন। যাওয়ার সময় রুবিনা ঘর থেকে নগদ চার লাখ টাকা নিয়ে যায় বলে জানান তার বাবা।

ওই তিন কিশোরীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সবার পরিবারই নিম্নআয়ের। ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় মেরাদিয়া নোয়াপাড়ার ওই দ্বিতীয় তলা ভবনের নিচ তলায় বসবাস করে তারা। রুবিনার বাবা রুবেল হোসেন একজন বিদ্যুৎকর্মী এবং মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। বর্ষার বাবা মো. বশির রিকশা চালান, তার মাও অন্যের বাসায় কাজ করেন। আর রিজুয়ানার বাবা আসাদুজ্জামান রিপন একটি ওষুধ কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত ও মা বাসায় দর্জির কাজ করেন।

নিখোঁজ রুবিনার বাবা রুবলে হোসেন বলেন, তারা তিনজন একসঙ্গে প্রতিদিন সময় কাটাতো। তবে স্কুল-মাদরাসায় তারা নিয়মিত যেত। বিটিএস নামে অনলাইনে কী একটা যেন দেখে, বিষয়টি আমরা তেমন গুরুত্ব দেইনি। তবে এর থেকে এমন একটা কিছু হয়ে যাবে, সেটা ভাবতেই পারছি না। নিখোঁজ হওয়ার ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ আগে তারা খাওয়া-ঘুম ছাড়া বাকি সময় একসঙ্গে কাটাতো। রিজুয়ানা মেয়েটির কাছে তার মায়ের একটা ফোন ছিল। এ ফোনটা দিয়ে তারা বিভিন্ন কিছু দেখছে এমনটাই আমার চোখে পড়েছে।

রিজুয়ানার বাবা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন বাসার লকারের চাবি হারিয়ে ফেলি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাচ্ছিলাম না। লকার থেকে স্বর্ণালংকারসহ চার লাখ টাকা নিয়ে যায় রিজুয়ানা। সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ওইদিন দুপুরে বাসার নিচ থেকে রিকশায় করে বের হয় আমার মেয়ে। রুবিনা আর বর্ষা আগেই চলে যায়। তারপর তারা কোথায় যে গেল আর খোঁজে পাইনি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close