শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া
সাতকানিয়ায় বাঁধভাঙা প্লাবন
চাষির মাথায় হাত
সাতকানিয়ার সোনাকানিয়ায় বাঁধভাঙা প্লাবনে বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে বোরো ধানের চারা, রবিশস্য ও মাঠের অন্যান্য ফসল। এতে চোখে অন্ধকার দেখছেন চাষিরা।
সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া এলাকার সাইরতলী, আসারতলী ও মঙ্গলচাঁদপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত সবজির মাঠ পরিদর্শনকালে একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, অনেক কৃষক দাদন নিয়ে বোরো বীজতলা ও রবিশস্যের আবাদ করেছিলেন, বাঁধভাঙা প্লাবনে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বনবিভাগের অভিযানে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের কৃত্রিম হ্রদের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। এর কয়েক বছর আগে কৃষকের আপত্তি সত্ত্বেও এলাকার প্রভাবশালীরা মাছ চাষের জন্য সাতকানিয়া ছড়ায় বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করে। পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সেই কৃত্রিম হ্রদের বাঁধ কেটে দেওয়ায় আকস্মিক শ্রোতে বসতবাড়ি বিধ্বস্ত ও জমির ফসল নষ্ট হয়।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ জনপদ। বুধবার দুপুরে সাইরতলী এলাকার ছাবের আহমদ জানান, তার আলু, মরিচসহ ৫০ শতক জমির রবিশস্য নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে। মাহফুজুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আমার প্রায় ৪০ শতক জমির মরিচ, আলুখেত নষ্ট হয়ে গেছে। দাদন নিয়ে আবাদ করার পর খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাদন কীভাবে শোধ করব নিজেই বুঝতে পারছি না। তার মতো আরো ২৫০ কৃষক বোরো ধান ও রবিশস্যের ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, সাতকানিয়ায় বাঁধ কাটা প্লাবনে ৫ হেক্টর আলু, ৩০ হেক্টর বোরো, ৩০ হেক্টর বিভিন্ন সবজি (ডাল ও সরিষাসহ), ০.৩২ হেক্টর পান, ১.৫ হেক্টর পেপে বাগান, ২ হেক্টর মরিচ মিলিয়ে প্রায় ৭০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাঁধভাঙা পানিতে উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে কৃষকের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারি সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য নদভীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ নাছির ও মনছুর আলমের নেতৃত্বে ২০২১ শুরুর দিকে অবৈধভাবে সোনাকানিয়া ছড়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করে সেখানে মৎস্য চাষ শুরু হয়। এই বাঁধের কারণে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার অন্তত ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হয়। কৃষকরা অভিযোগ ও আপত্তি করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। শেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বনবিভাগ কোনো নোটিস না দিয়ে, কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিয়েই বাঁধটি কেটে দেয়। এতেই প্রবল শ্রোতে পানি ঢুকে কাঁচা বসতবাড়ি ও খেতের ফসল ডুবে নষ্ট হয়।
"