সংসদ প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

আ.লীগ ৩৭, স্বতন্ত্র ১০ জাপা পাচ্ছে ২ আসন

জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসনওয়ারি তালিকা পাওয়ার পর সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এরপর নির্বাচিত কতজন সংসদ সদস্য এবং কোন দল বা স্বতন্ত্র কতজন- এ বিষয়ে নামের তালিকা পেলে নারী আসনে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করবে ইসি। নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পাবে ৩৭টি নারী আসন। জাতীয় পার্টি পাবে ২টি, স্বতন্ত্র এমপিরা জোটবদ্ধভাবে ১০ নারী সদস্য পাবেন। বাকি তিন দল (জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি) জোটবদ্ধ হলে তারা পাবে একটি আসন।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরপরই নবনির্বাচিত এমপিদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সংসদ অধিবেশন শুরুর জন্য তাদের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তালিকা পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তফসিল ঘোষণার বিধান রয়েছে। আর শপথ-পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্নের তাগিদ রয়েছে। ফলে তালিকা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ইসি ও সংসদ সচিবালয় থেকে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। ইসি সচিব বলেন, তালিকা পাইনি, গায়ে পড়ে কিছু করব না। আর সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন শাখা) বলেন, ১০ জানুয়ারি শপথের পরপরই তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছি ইসিতে।

জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সংসদ অধিবেশন শুরু না হলে এবং কতজন সংসদ সদস্য আছেন- যতক্ষণ সংসদ সচিবালয় না জানাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা গায়ে পড়ে কিছু করব না। সংরক্ষিত আসনের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, প্রস্তুতি থাকবে না। আমরা হলাম কমিশন; আমাদের কাজ নির্বাচন করা। প্রস্তুতিটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের একটা টাইমফ্রেম বলা আছে নির্বাচনী বিধিমালায়। তার আলোকে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হলে সংসদ সচিবালয় থেকে তালিকা পাওয়ার আগের কাজগুলো গুছিয়ে রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনে বলা আছে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ নিয়েছেন, তাদের তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ সচিবালয় থেকে ইসিকে পাঠাবে। তালিকা পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. নাজমুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কমিশন তালিকা পায়নি, এটা বলার কথা নয়। যেদিন অর্থাৎ গত ১০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নেওয়ার পরপরই ওই তালিকা কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। এর আলোকে তারা দল বা জোটগত দিকগুলো নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করে নারী সংসদদের নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।

জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন-২০০৪ সালের ৩(১) ধারায় বলা আছে, সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইবার তারিখের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদেও (৩) দফার অধীন সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক পৃথক তালিকা প্রস্তুতি করিবে।

৩(৩) কোনো নির্দলীয় সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান করিলে নির্বাচন কমিশন যোগদানকারী সদস্যকে সংশ্লিষ্ট দল বা জোটের মনোনয়নে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে গণ্য করিয়া তাহার নাম, উক্ত দল বা জোটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিবে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জোটের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিজয়ী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা তাদের অবস্থান ইসিকে জানাবেন। ইসি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সদস্যদের তালিকা (ভোটার) প্রস্তুত করবে। তবে আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন হতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট হয়েছে ৯ জানুয়ারি। সে হিসাবে ইসিকে ভোটের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারে ইসি। তবে যেকোনো নির্বাচনে ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তফসিল ঘোষণার সুযোগ নেই। এবারের নির্বাচনে ৬২ স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের বাইরে নিজ দলের প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছে মাত্র দুটি দল- জাতীয় পার্টি ১১ আসনে ও কল্যাণ পার্টি একটি আসনে। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দুটি আসনে জিতলেও দল দুটি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৫০। এ ৫০ সংখ্যাকে ৩০০ সংসদীয় আসন দিয়ে ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, তাকে কোনো দল বা জোটের যেসংখ্যক সদস্য শপথ নিয়েছেন, তা দিয়ে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যক নারী সদস্য হবে ওই দল বা জোটের। গুণফল ভগ্নাংশ হলে সেক্ষেত্রে ০.৫ বা তার থেকে বেশিসংখ্যকের জন্য একটি আসন পাওয়া যাবে। আইনে লটারির বিধানও রয়েছে। সে হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩ আসনের বিপরীতে ৩৭ নারী সদস্য পাচ্ছে। জাতীয় পার্টির ১১টি আসনের বিপরীতে ২, স্বতন্ত্র ৬২ জন জোটবদ্ধভাবে ১০ নারী সদস্য এবং বাকি তিন দল (জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি) জোটগতভাবে এলে তারা একটি আসন পাবে। অবশ্য সংরক্ষিত আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে চাইলে যেকোনো দল বা জোট তাদের ইচ্ছামতো যেকোনো দল বা জোটের সঙ্গে একত্রীভূত হতে পারবে।

আইন অনুযায়ী, শপথ নেওয়া সংসদ সদস্যরাই সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে ভোটার হবেন এবং এ ভোটাররা শুধু নিজেদের দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও সংরক্ষিত মহিলা আসন- এ দুটির নির্বাচন একত্রে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close