ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২৪

উদ্যোগ

কাঠের লিফট

নিজস্ব প্রযুক্তিতে লিফট বানিয়ে তাক লাগিয়েছেন ঈশ্বরদীর আমজাদ হোসেন। তার বানানো লিফট বিদ্যুৎ না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইপিএসে চলে। পেশায় তিনি ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান।

নিজের তিনতলা ভবনে ওঠানামার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে লিফটটি তৈরি করেছেন। ষাটোর্ধ্ব আমজাদ হোসেন পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে দিয়ে চলাচলের সময় পথচারীদের অনেকেই আমজাদ হোসেনের লিফটের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। উদ্ভাবক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি পেশায় একজন ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান। পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে ২ বছরের ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মোটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভোল্টেজ স্টেবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিকসামগ্রী তৈরি করেছি। এর আগে করেছি টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজ।’

তিনি বলেন, ৩ বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে ১ শতক জমিতে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য তিনতলা ভবন নির্মাণ করি। ভবনের পেছন দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ওঠানামার জন্য একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এছাড়া দোকানের মালামাল উঠাতে ও নামাতে বিড়ম্বনা পড়তে হয়। এ সমস্যা দূর করতে আমি নিজে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করলাম।’

আমজাদ বলেন, ‘শুরুতে বিষয়টি সহজ ছিল না। প্রায় ৩ মাস এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। লিফট তৈরির জন্য একটি কন্ট্রোল বক্স, ১ টন ওজন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, ১ কিলোওয়ার্টের আইপিএস, এক হর্সের মোটর, স্টিলের ওয়ারের, মেটাল স্টাকচার ও কেবিনের জন্য একরিলিকা গ্যাস দিয়ে তৈরি শুরু করি লিফট। প্রায় ৩ মাস লেগেছে তিনতলায় ওঠানামার জন্য লিফট তৈরি করতে। আমার ব্যবসায়িক ভবনটি চারতলায় উন্নিত করা হবে। লিফটে চারতলা পর্যন্ত ওঠানামার জন্য তৈরি করি।’

লিফটের বর্ণনা দিয়ে এ উদ্ভাবক বলেন, ‘লিফটে উঠে সুইচ চাপলে দ্বিতীয় তলায় যাবে। সেখানে নামার প্রয়োজন না হলে আরেকটি সুইচ টিপে তৃতীয় তলায় ওঠা যাবে। একইভাবে আবার তৃতীয় তলা থেকে নিচে নামতে হবে। একসঙ্গে তিনজনের বেশি মানুষ এ লিফটে যাতায়াত করতে পারবে না। ১ টন ওজনের মালামাল ওঠানামা করানো যাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে লিফট চালাতে জেনারেটরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমার এ লিফট আইপিএস দিয়েও চালানো যাবে। লিফট বানাতে যেসব ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, সবই আমার নিজের তৈরি। লিফটে ব্যবহৃত কন্ট্রোল তৈরি করতে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এটি আমি খুবই স্বল্প খরচে তৈরি করেছি। চারতলা ভবনের একটি লিফটে অন্তত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে আমার খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা।’

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নিজের ব্যবহারের জন্য লিফট তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কীভাবে আরো আধুনিক করার যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। এ লিফট আরো উন্নত করতে বিশেষজ্ঞ ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ পেলে ভালো হয়। স্বল্প খরচে তিন-চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য নির্মিত এ লিফট বাণিজ্যিকভাবে তৈরির জন্য যদি সরকার অনুমতি দেয়, তাহলে নিরাপদ ও সাশ্রয়ীমূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close