এ এস এম রিয়াজুল ইসলাম

  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

পর্যবেক্ষণ

আস্থার নাম নুরুজ্জামান আহম্মেদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ ও আদিতমারী) আসনে বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদকে টানা তৃতীয়বার ‘নৌকার’ টিকিট (মনোনয়ন) দেওয়ায় এলাকার জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এলাকাবাসী নুরুজ্জামান আহম্মেদকে আবারও এ আসনে বিজয়ী করতে চায়।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সমাজসেবক, দানবীর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গণমানুষের নেতা সাবেক এমপি মরহুম আলহাজ করিম উদ্দীন আহমেদের জ্যেষ্ঠপুত্র নুরুজ্জামান আহম্মেদ সততার রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে বেড়ে ওঠে, ছাত্র ও তৃণমূল রাজনীতি থেকে প্রায় ৫০ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞ রাজনৈতিক, ক্লিন ইমেজের নেতা, আদর্শ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সবার আস্থাভাজন, এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কথা সরাসরি কিংবা ফোনে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে শুনেন, এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নেন, সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন ও তাদের সমস্যার কথাগুলো শুনে সমাধানের জন্য গঠনমূলক পরামর্শ দিকনির্দেশনা প্রদান ও সমাধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে নিরলস ও অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নুরুজ্জামান। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুজ্জামান। প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েই বাজিমাত করেন আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা। ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পুরস্কার হিসেবে সমাজকল্যাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা এই নেতা যে কতটা জনপ্রিয় তা আরো একবার প্রমাণিত হয় ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের আসন লালমনিরহাট-২ থেকে আবারও তার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে।

এরপর নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরুজ্জামান আহম্মেদকে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অবিচলভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

লালমনিরহাট-২, (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) এলাকায় ১০ বছরেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়। এলাকায় নতুন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, পুরোনো ব্রিজ-কালভার্ট সংস্কারসহ দুই উপজেলার ৯০% রাস্তাঘাট পাকা করেন। এলাকায় ৯০% লোক বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করেন। এলাকায় ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গ্রামকে শহরের রূপান্তর করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ, সরকারি করিমউদ্দিন টেক্সটাইল কলেজ, সরকারি পলিটেকনিক স্কুল ও কলেজ, মডেল মসজিদ, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অটিস্টিক স্কুল, মা ও শিশু হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, ইনডোর স্টেডিয়াম, আউটডোর স্টেডিয়াম, দুই উপজেলার সব স্কুল, কলেজে, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, মন্দিরগুলোয় আর্থিক অনুদান, স্কুল-কলেজে আধুনিক ও নতুন বহুতলা ভবন নির্মাণ, ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ও সাইকেল বিতরণ, শিক্ষাক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের ফলে কালীগঞ্জ সারা দেশে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

বিভিন্ন ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজনসহ খেলাধুলায় ব্যাপক অনুদান দেওয়ায় এই জেলার ছাত্রছাত্রী খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় অনেক দূর এগিয়েছে।

কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া ছাড়াও চিকিৎসাসেবার খোঁজ খবর নেন এমপি। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তভাতাসহ লিভার সিরোসিস, কিডনি, জটিল ও কঠিন রোগীদের আর্থিক অনুদান দিয়েছেন তিনি। অসচ্ছল ও দরিদ্র-হতদরিদ্র মানুষের এককালীন অনুদান, হুইলচেয়ার বিতরণসহ হতদরিদ্রদের গাভি, রিকশা, সাইকেল, গৃহহীনদের জন্য গৃহ, অসচ্ছল পরিবারের মহিলাদের সেলাই মেশিন, কৃষকদের পাওয়ার ট্রিলার ও ধান কাটার মেশিন, সোলার পাওয়ার বিতরণ করেছেন। শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের নগদ টাকা সাহায্য ও খাদ্য বিতরণ, ঢেউ টিন বিতরণ, টিআর, কাবিখা, টিউবওয়েল স্থাপন ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ রংপুর অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ৬য় লেন করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় লালমনিরহাটে স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু ও মহিপুরে ‘শেখ হাসিনা সেতু’ নির্মাণ করে বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে জেলা শহর লালমনিরহাটের ও ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ করে দিয়েছেন। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে তিন-বিঘা করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে দেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। লালমনিরহাটের দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা সিট মহল করিডোর গেট ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকায় জনগণের মুখে হাসি ফোটে।

ঢাকা টু বুড়িমারী নতুন ট্রেন ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে চালু হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিক মূল্যায়নে ৫২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘৪র্থ স্থান’ অর্জন করেছে। ২০২১ সালে তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘দ্বিতীয় স্থান’ অর্জন করে। ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিক মূল্যায়নে ৫২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে ‘নবম স্থান’ অর্জন করে। প্রতিবন্ধীদের থাকার ও কর্মসংস্থানের জন্য রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ১৫ তলাবিশিষ্ট সুবর্ণ ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।

এদিকে বর্তমানে দেশে ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগে যেখানে মাসে ৭৫০ টাকা ভাতা দেওয়া হতো তা বাড়িয়ে এখন ৮৫০ টাকা করা হয়েছে। ভাতা কর্মসূচির বাইরেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করেছে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই উপবৃত্তির উপকারভোগী হয়েছে এক লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। এছাড়া দেশের অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকি হ্রাসকল্পে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা’ চালু করা হয়েছে।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট ছিল ১ হাজার ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট ১২ হাজার ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে বয়স্কভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ২০ লাখ প্রবীণ ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা, যা জনপ্রতি ৬০০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮.০১ লাখ প্রবীণ ব্যক্তির জন্য বার্ষিক বাজেট উন্নীত হয়েছে ৪২০৫.৯৬ কোটি টাকায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের দরিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্কভাতা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে আরো ১৫০টি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৬২টি উপজেলায় ভাতা প্রাপ্তির উপযোগী শতভাগ লোক ভাতার আওতায় এসেছে।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ৯ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৭০ কোটি টাকা। তা মাথাপিছু মাসিক ৫৫০ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১৭১১.৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close