নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

নভেম্বরে সড়কে গেছে ৪৬৭ প্রাণ

দেশে গত নভেম্বরে এক মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৭ জন নিহত এবং ৬৭২ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ৫৩ ও শিশু ৬৬ জন। ৫৪১টি সড়ক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। গতকাল শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। দুর্ঘটনায় ১০৬ পথচারী নিহত হয়েছেন, যা নিহতদের ২২.৬৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, অর্থাৎ ১৪.৫৬ শতাংশ। এ সময়ে পাঁচটি নৌ দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। ২২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র : দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী ১৮১ জন (৩৮.৭৫%), বাসযাত্রী ৮ (১.৭১%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপভ্যান-পুলিশভ্যান আরোহী ২০ (৪.২৮%), প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো জিপ আরোহী ১৩ (২.৭৮%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১০৬ (২২.৬৯%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-চান্দের গাড়ি-টমটমণ্ডপাওয়ারটিলার-ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি) ১৪ (২.৯৯%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৯ জন (৪.০৬%) নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৬। (বাস ৮৩, ট্রাক ১২৬, কাভার্ডভ্যান ৩৩, পিকআপ ২৯, ট্রাক্টর ১২, ট্রলি ১৩, লরি ১৫, ডাম্পট্রাক ৪, পুলিশভ্যান ১, অক্সিজেনবাহী ট্যাংকার ১, মিকচার মেশিন গাড়ি ১, চাষের গাড়ি ১, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেট কার ২২, অ্যাম্বুলেন্স ৫, পাজেরো জিপ ৪, মোটরসাইকেল ২১১, থ্রি-হুইলার ১৩৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৪ (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-লাটাহাম্বা-টমটমণ্ডপাওয়ারটিলার-ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি-আখ মাড়াই মেশিন গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩৩ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৭টি।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান : ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩৮টি দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২১টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়ি জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

নিহতদের পেশাগত পরিচয় : গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৭, চিকিৎসক ৩, আইনজীবী ৩, সাংবাদিক ৪, প্রকৌশলী ২, ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৫, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৬, বিয়ের কাজী, মুয়াজ্জিন ও ইমাম ৪, ভারতীয় নাগরিক ২, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা ১, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৬, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৩, ইউপি মেম্বারসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১২, পোশাকশ্রমিক ৫, কর্ণফুলী গ্যাস লাইনের শ্রমিক ১, পদ্মা সেতুর রেলশ্রমিক ১, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ১, মোটর মেকানিক ১, ইটভাটার শ্রমিক ২, পাটকলের শ্রমিক ১, দিনমজুর ৬, মানসিক প্রতিবন্ধী ৪ এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১, তিতুমীর কলেজের ১ ছাত্রসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা-কলেজের ৬৬ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ : ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close