তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

অযত্নে মজিদপুর জমিদার বাড়ি

কুমিল্লার তিতাসে দুই শতাধিক বছরের পুরোনো মজিদপুর জমিদার বাড়ি অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির অধিকাংশ স্থাপনা এখন বিলীনের পথে। সংস্কার করলে ভ্রমণপিপাসুর ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে হোমনা-গৌরীপুর সড়কে ১০ কিলোমিটার উত্তরে তিতাসের কড়িকান্দি বাজার। এই বাজার থেকে পশ্চিম দিকে ৫ কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী মজিদপুর জমিদার বাড়ি।

জানা যায়, প্রায় ১৮ শতকের দিকে শ্রী রামলোচন রায় বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিতাস, হোমনা, মেঘনা ও মুরাদনগর এলাকা ছিল তার জমিদারির আওতাধীন। এই বাড়িতে মোট ১৭টি ভবন ছিল। এখন মাত্র ১৩টি অবশিষ্ট আছে। বাকি ৪টি ধ্বংসপ্রাপ্ত। এ ছাড়া ১টি দিঘি ও ২০টি পুকুর খনন করা হয়েছিল। সেগুলো এখনো আছে।

ইতিহাসে এই বংশের কয়েকজন জমিদারের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- শ্রী কালীচরণ রায়, ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, শিবচরণ রায়, পিয়ারী মোহন রায়, বিহারী মোহন রায়, শশী মোহন রায়, শরৎচন্দ্র রায়, মোহিনী মোহন রায়, ক্ষিতিষ চন্দ্র রায়, গিরিশ চন্দ্র রায়, শিরিশ চন্দ্র রায়, হরলাল রায়, যোগেশ চন্দ্র রায়, শ্রী নারায়ণ চন্দ্র রায়, শ্রী দুর্গাচরণ রায়, ক্ষেত্র মোহন রায়, কুঞ্জ মোহন রায় ও উপেন্দ্র চন্দ্র রায়। তাদের মধ্যে, ক্ষেত্র মোহন রায় তিতাস উপজেলার প্রথম এন্ট্রাস পাস, প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং আইনজীবী। উপেন্দ্র চন্দ্র রায় তিতাস উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার। রামলোচন রায়ের মতো আরো দুজন নামকরা জমিদার হলেন রাম সুন্দর রায় ও রামগতি রায়।

শ্রী রামলোচনের পরে তার বংশধররা ২০০ বছর এই জমিদারি দেখ শোনা করতেন। জমিদারি প্রথার অবসান ঘটলে তার বংশধররা সম্পত্তি রেখে ভারতে পাড়ি জমান। সেই থেকে পড়ে আছে জমিদার বাড়িটি। এ বাড়িতে এখন আর জমিদারদের কেউ থাকেন না।

সরেজমিনে মজিদপুর জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, একসময় জৌলুস আর ঠাটবাট থাকলেও জমিদার বাড়িটি এখন বিরান পড়ে আছে, চারদিকে থমথমে ভূতুড়ে পরিবেশ। ভবনগুলোর দেওয়ালে জন্মেছে পরগাছা। নোনা ধরা ইটের দেয়াল খসে খসে পড়ছে। বাড়ির নির্মাণশৈলী এখনো নজর কাড়ে। ভাঙাচোরা অবস্থায় বাড়িটি এখন কোনো রকমে টিকে আছে আর ধ্বংসের প্রহর গুনছে।

পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন জমিদার বাড়িটি অমূল্য প্রত্নসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলেও, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের মুখোমুখি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জমিদার বাড়িটি দেখতে ভিড় জমায় ভ্রমণপিপাসুরা। সংরক্ষণ করা হলে জমিদার বাড়িটি দর্শনীয় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে বলে অভিমত স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close