প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

শীতকাল এবার কেমন হবে

ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ ভারতে আঘাত হানার পর বাংলাদেশ জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে শীত শুরু হওয়ার কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে নভেম্বরের শেষদিক থেকে, যেটার খুব একটা তারতম্য হয়নি এবারও। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি কিছুটা পাল্টে গেছে। যার কারণে শীতকালের সময় এবং ধরন ঠিক আগের মতো হচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদরা বলেন, সাধারণত স্বস্তিদায়ক তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ধরা হয়। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়কালকে শীতকাল হিসেবে ধরা হয়। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘এবার উত্তরাঞ্চলে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে। এটিকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবেও দেখা যায়। কারণ ২.৬ থেকে শুরু করে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গেলে সেটা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে পড়ে।’

গত ৩০ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা দেখেছেন, ডিসেম্বরে সাধারণত একটি থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা থাকে। অবশ্য আরেক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান মনে করেন শীতকালের শুরুটা মূলত ডিসেম্বরের শেষার্ধের দিকে অর্থাৎ ১৬ তারিখের পর কোনো একটা সময় থেকে হবে।

তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের পরপর তাপমাত্রা হঠাৎ করে নেমে গেলে শীত অনুভূত হবে, তবে প্রকৃত অর্থে এটি শীতকাল নয়।

তিনি বলেন ‘এ মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে একটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সেটি পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে।’

বিশ্বব্যাপি তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল এ বছরেরই জুনে। আমেরিকা ও ইউরোপের মতো শীতপ্রধান জায়গায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেছে মানুষ। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা উচ্চতম রেকর্ড ছুঁয়েছে, যার একটা প্রধান কারণ ছিল ‘এল নিনো’ নামে প্রাকৃতিক আবহাওয়া চক্র।

এই ‘এল নিনো’ ও একই সঙ্গে বিশ্বের বাড়তে থাকা তাপমাত্রার প্রভাবে এবারের শীতকালটা আগের তুলনায় কিছুটা উষ্ণ হওয়ার কথা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, যে অবস্থাটা মে পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এল নিনো সক্রিয় থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে সাধারণত বেশি তাপমাত্রা দেখা যায়, বলছিলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩০ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এ বছর ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪.৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে বলে ধারণা দেন এই আবহাওয়াবিদ।

পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় চিত্রের দিকে তাকালে তাপমাত্রা বাড়তে থাকার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

ডিসেম্বর : ২০১৮ সালে ১৩.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৯ সালে ১৪.২১৪ ডিগ্রি, ২০২০ সালে ১৪.২৫ ডিগ্রি, ২০২১ সালে ১৫.৪৫ ডিগ্রি, ২০২২ সালে ১৫.১৯৪ ডিগ্রি।

জানুয়ারি : ২০১৮ সালে ১১.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৯ সালে ১২.৩৭ ডিগ্রি, ২০২০ সালে ১৩.০৯ ডিগ্রি, ২০২১ সালে ১৩.৩২ ডিগ্রি, ২০২২ সালে ১৩.৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৩০ বছরের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারির গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। যেটাও এবার সামান্য বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আবহাওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর এই সময়ে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করলে শর্ট পিরিয়ডে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনাকেও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলা যায়, সামগ্রিকভাবে এবার শীতের সময় কিছুটা ওয়ার্ম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিসেম্বরকে শীত শুরু হওয়ার স্বাভাবিক সময় হিসেবে ধরা হলেও আগের তুলনায় শুরুর সময়টা পেছানোর প্রবণতা দেখছেন ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শীতের প্রবণতা কম হচ্ছে, আবার অন্যদিকে শেষটা ফেব্রুয়ারি ধরা হতো, যেটা এখন মার্চের প্রথম সপ্তাহ নাগাদে গিয়ে ঠেকছে বলে জানান তিনি।

মান্নান আরো বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর শীত অনুভব হয় না তেমন। এমনকি, গত কয়েক বছরে জানুয়ারিতেও আমাদের এক্সপেক্টশন অনুযায়ী শীতের অনুভূতি আসে নাই।

ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, তীব্র ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ কমে গেছে। সে তুলনায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সময়কাল বেড়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ভিত্তিতে অন্তত তিন দিন স্থায়িত্বকাল অনুযায়ী শৈত্যপ্রবাহকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।

মৃদু> ৮-১০ ডিগ্রি, মাঝারি> ৬-৮ ডিগ্রি, তীব্র> ৪-৬ ডিগ্রি, অতি তীব্র> ৪ ডিগ্রির নিচে।

তিনি আরো জানান, জানুয়ারি নাগাদ সাধারণত একটি থেকে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা থাকে। যেটা এবারও থাকবে। তবে আবহাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বাভাস ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর্যন্ত মোটামুটি সঠিক হিসাব পাওয়া যায়। এরপর যত বেশি সময়ের হিসাব করা হয়, তত সেটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে।

পাঁচ দিনের হিসাব করলে সেটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে নেমে আসে, আর সাত দিন পর্যন্ত গেলে সেটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে আসে, বলছিলেন মল্লিক। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close