আরিফ খাঁন, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
পাবনার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প
সেচ খালে কচুরিপানা চাষাবাদ ব্যাহত
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে পাবনা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প। প্রধান ক্যানেল (খাল) কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে গেছে, সংযোগ খালগুলো দখল করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে শত শত হেক্টর জমির চাষ। এই খালের পানি জমি চাষের কাজে ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পেরে বিপাকে আছেন স্থানীয় চাষিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে , সাঁথিয়ার তলট গ্রামে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান সেচ খাল বর্তমানে কচুরিপানায় ঢাকা একটি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় কমবেশি ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ খালটির অধিকাংশই এখন প্রায় ভরাট হয়ে এই অকেজো অবস্থা হয়েছে। এছাড়া বেড়ার পেঁচাকোলা, হরিরামপুর, বায়া, পানিশাইল চাকলাসহ অনেক এলাকায় সেচ ক্যানেল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কোথাও ক্যানেল ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৪ হেক্টর কৃষি জমি সেচের আওতায় নিতে ১৯৯২ সালে ৩৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হয় পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প। বেড়া উপজেলার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদ ও কৈটোলায় যমুনা নদীর পাড়ে পানি উত্তোলন ও নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয় দুটি পাম্প স্টেশন। নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় সেচ খাল, নিষ্কাশন খাল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, স্লুইসগেট, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে পাম্প হাউসের মাধ্যমে হুরাসাগর নদী থেকে প্রধান সেচ খালের মাধ্যমে পানি যাওয়ার কথা ১৯টি সেকেন্ডিয়ারি খালে। যার ৮টি সম্পূর্ণ বন্ধ। ৪৭টি টারশিয়ারি খালের মধ্যে ৩০টিই অকেজো। ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে শুরুতে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হলেও বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় গেল ৩০ বছরে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও এখন মাত্র ৭০০ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্প।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রকল্পের সেচ ক্যানেলগুলো দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ায় কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যানেল সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার থেকে বরাদ্দ থাকলেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো উদ্যোগই। অন্যদিকে প্রধান খালের সঙ্গে সংযুক্ত সেকেন্ডিয়ারি সেচ খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। বেড় জাল সুতি জালসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় বন্ধ করা পানির প্রবাহ পথ। শত শত হেক্টর জমিতে সম্ভব হচ্ছে না সেচ কাজ ও পানি নিষ্কাশন। জলাবদ্ধতায় রবিশস্য আবাদ করতে পারছেন তা কৃষকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা কমছে ফসলের উৎপাদন।
এ ব্যাপারে বেড়ার পেঁচাকোলা গ্রামের কৃষক হালিম জানান, সেচ ক্যানেল ভেঙে মিশে গেছে পাড়ের জমির সঙ্গে। এগুলো ঠিক করার নাকি টাকা আসে তবু এগুলো ভালো করে ঠিক করা হয় না। প্রভাবশালীরা খালে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছ চাষ করে। অথচ সেচের জন্য পানি থাকে না। এভাবেই এই প্রকল্প চলছে। এটি এখন প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী।
পানি ব্যবহারকারী সমিতির সভাপতি আনছার আলী জানান, এই খালের পানি নিয়ে অতি অল্প খরচে কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে পারেন। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম পড়ে। কিন্তু এই সেচ সুবিধাপ্রাপ্তের সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা বাড়ার বিপরীতে তা আরো কমেছে। সেচবঞ্চিত অন্যান্য কৃষকদেরও যদি এই সেচের আওতায় আনা যায় তবে চাষাবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বাড়বে।
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী এ ব্যাপারে জানান, ক্যানেলগুলো পরিচর্যার যে ব্যয়-বরাদ্দ আসে সে অনুযায়ী সংস্কার করা হয়ে থাকে। তবে এ সংস্কার পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি একটি প্রকল্প আমরা হাতে পাচ্ছি, সেটি বাস্তবায়ন হলে আশানুরূপ সেচ সুবিধা পাবেন চাষিরা। এছাড়া খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের মতো কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
"