নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

শ্রম আইন যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর উদ্যোগ

শ্রম আইনে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়ে জানানোর উদ্যোগ জানিয়েছে সরকার। বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার, কাজের পরিবেশ ও শ্রমজীবীদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে মতামত ব্যক্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ঘোষণা করেছে যেসব দেশ, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শ্রম অধিকারের সনদ লঙ্ঘন করবে, সেসব দেশ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কথাও আলোচনায় রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সব দেশের শ্রম পরিস্থিতি আরো উন্নত করতে। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে আলোচনা বলতে পারেন, ত্রি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ পাঁচজন রাষ্ট্রদূত ও তিনজন সচিব মিলে যে একটা প্ল্যাটফরম আছে, সেই বৈঠকটা এ মাসে করার কথা। সেজন্যই আজ বসেছিলাম। এতকাল যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কীভাবে জানানো যায়। আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল- এ ৫ বছর মেয়াদি। সেক্ষেত্রে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু বাস্তবায়ন হয়নি।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন অধিকার নিয়ে সভা করেছি। আমাদের কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামীতে আরো কী করতে হবে, তা নিয়েই আজ কথা বলেছি। ২০২৬ সালে যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে, সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা অন্য দেশগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু অঙ্গীকার দেখতে চায়, সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছি।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধনী করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল। তাদের চাওয়াগুলো পূরণ করার জন্য এসব সংস্কার এনেছিলাম। গত ১০ বছরে আমরা অনেক সংস্কার এনেছি। যে কারণে শ্রম আইনে তিনবার সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের শিল্পায়নের কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিয়েও কথা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।

আমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ধরুন আমাদের বাণিজ্যে যারা বড় অংশীদার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার আমরা রপ্তানি করি শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আরো যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। বরং পৃথিবীর মধ্যে বলা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করছি। কিন্তু তাদের কিছু দাবি আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো অনুমোদন করেছি, সেই অনুযায়ী আমাদের শ্রম আইনে একটা ন্যূনতম থ্রেশহোল্ড আছে, একটি কারখানায় মোট শ্রমিকের ২০ শতাংশ সদস্য যদি সংগঠন করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। এটাকে ১০ শতাংশ করার দাবি তারা করেছিল, আমরা ১৫ শতাংশ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আর বেপজা আইনের ক্ষেত্রে সংগঠন করার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন বলি না, আইনে সেটাকে বলা হয়েছে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, সেখানে তারা বলে যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তন করত হবে। বিষয়টি প্রায়ই একই। এখনো সংগঠন হচ্ছে, তখনো সংগঠন হবে। কিন্তু নামটি যেন শ্রম সংগঠন হয়। আমরা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইনটা সংশোধন করা হবে। সংশোধনটা কীভাবে হবে, সেটা সব অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। এখানে মোটাদাগে দুটি জিনিস তারা দাবি করেছে। তারা চাচ্ছে বেপজাতে শ্রম সংগঠন করার অধিকার দিতে আর থ্রেশহোল্ডটা কমিয়ে আনা অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত সমঝোতায় যেসব ইস্যু ছিল, সেগুলো নিয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর একটা উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন। বলেছেন, আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে, এখন তাদের চাওয়াগুলো আরো বেশি বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়াগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের ৬০ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যায়। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ।

বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অংশীজন যারা আছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে কী করা হবে। এরই মধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, বিশেষ করে আইএলও আইনে ত্রিপক্ষীয়ভাবেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবেন, কীভাবে করা হবে। বেপজার শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি। এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হবে কি না, জানতে চাইলে সচিব বলেন, তাদের চাওয়াগুলো যে পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইনটিই বেপজার মতো প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন আনা হয়েছে, এ অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এজন্য কয়েকদিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close