হাফিজুর রহমান, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল)

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

টাঙ্গাইলের মধুপুরে অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শাল-গজারির বন মধুপুর গড়াঞ্চল। এক সময় মধুপুর উপজেলার বনাঞ্চলসহ পাশের ধনবাড়ী উপজেলায় এলাকাভেদে মাটির ঘরই ছিল বাসস্থানের একমাত্র অবলম্বন। শীত ও গরমে ঘরগুলো ছিল আরামদায়ক। মাটির এসব ঘর প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার গণমানুষের ঐতিহ্যও বহন করে।

টাঙ্গাইলের বৃহত্তর মধুপুর উপজেলায় বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে মাটির ঘর তৈরি হতো। তবে কালের আবর্তে সেই পুরোনো ঐতিহ্যের মাটির ঘর আজ বিলুপ্তের পথে। আর্থিক সচ্ছলতা ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে মাটির ঘর নির্মাণে আগ্রহ নেই মানুষের। এক সময় উপজেলার পাহাড়ি এলাকার ধনী-গরিব প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাটির ঘর ছিল।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহত্তম গড়াঞ্চল পাহাড়ি বন এলাকা মধুপুর উপজেলা ভাগ হয়ে ২০০৬ সালে দুইটি উপজেলায় বিভক্ত হয়। ধনবাড়ী নামে আরেক নতুন উপজেলা গঠিত হয়। বহত্তর মধুপুর উপজেলা দুইটি উপজেলায় বিভক্ত হলেও ধনবাড়ী উপজেলার কিছু অংশ পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখনো সে অঞ্চলে চোখে পড়ে পুরোনো মাটির ঘর। তবে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। এ অঞ্চলের কৃষান-কৃষানি ও তাদের ছেলেমেয়েরা মিলেই অল্প কয়েক দিনেই তৈরি করতেন। মাটিতে কোদাল দিয়ে ভালো করে গুঁড়িয়ে নেওয়া হতো। তারপর পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাদা বানাতেন। সেই মাটি দিয়েই হয় ঘর। অল্প অল্প করে কাদা মাটি বসিয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার পূর্ণাঙ্গ ঘর তৈরি করতে সময় লাগত মাত্র মাস খানেক। সম্পূর্ণ হলে তার ওপর ছাউনি হিসেবে ব্যবহার হয় ধানের খড়। এমনভাবে ছাউনি দেওয়া হয় যেন ঝড়বৃষ্টি কোনো আঘাতেই তেমন একটা ক্ষতি করতে না পারে।

কাল পরিক্রমায় বর্তমানে অর্থনৈতিক সচ্ছল পরিবারের লোকজন মাটির দেয়াল দিয়ে ওপরে টিনের চালা দেন তারা। আবার ধনীদের বাড়িতে থাকত বিভিন্ন নকশা করা দুতলা ঘর। কারো কারো বাড়িতে শত বছরের মাটির তৈরি দুতলা বাড়ি লক্ষ্য করা যায়।

উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক সরকার জানান, তাদের বাড়িতে দুতলাসহ একাধিক মাটির ঘর ছিল। আর্থিক সচ্ছলতা এবং এলাকায় ইটভাটার কারণে বাপ-দাদার আমলের দোতলা মাটির ঘরটিও ভেঙে পাকা ঘর তৈরি করেছেন। তবে তাদের এলাকায় এখনো কিছু কিছু বাড়িতে মাটির ঘর রয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মধুপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি জানান, আগের দিনে আমাদের মধুপুরের শাল-গজারির বনে বেশির ভাগ লোক মাটির তৈরি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করত। বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে এসব কিছুটা পরিবর্তন হয়ে টিনের বা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে। সেই সঙ্গে কিছু গরিব অসহায় লোকজন আছে যাদের ঘর টিনের ঘর নির্মাণ করার সামর্থ্য নেই। তাদের প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close