গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে ইসি

নির্বাচনী এলাকার সন্ত্রাসী, ক্ষমতার দাপট বিস্তার করে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং উঠতি মাস্তানদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তালিকা ধরে এদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতেও বলেছে ইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা। পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা এবং বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া।

এদিকে, দায়িত্ব সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করা, কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা এবং সব দল ও প্রার্থীর সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করার ওপর জোর দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য ইসির পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

এ ছাড়া আগাম প্রচারের অংশ হিসেবে দেয়ালে সাঁটানো ব্যানার-পোস্টার অপসারণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) বদলির ইসির সিদ্ধান্তে প্রশাসনজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে কার ওপরে কোন দোষে বদলির খড়গ নামে, এ নিয়েই তটস্থ পুলিশ থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে রবিবার ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বদলি করা হচ্ছে মাঠ প্রশাসনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য। এখানে ইচ্ছা করে কাউকে বদলি করা হবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে এবং সেটি সুস্পষ্ট তাকেই বদলি করা হবে। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারেন, এসপি হতে পারেন, ইউএনও ও ওসিও হতে পারেন।

এদিকে ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা চিঠি গতকাল ৩০০ সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সব শ্রেণির ভোটার যাতে তাদের ভোটাধিকার অবাধ ও নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও স্থানীয় আস্থাভাজন কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আইন ও বিধিগত দিক উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করতে হবে। কারো অভিযোগ থাকলে তা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক চাঁদাবাজ, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে মোতায়েনসহ চিহ্নিত গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে বেশি সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পরিপত্রে বলা হয়, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন সেই নিশ্চয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আর ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোটকেন্দ্রের অবস্থান সম্পর্কে নির্বাচনের আগে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

ব্যানার-পোস্টার অপসারণ : সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সব প্রকার প্রচারণাসামগ্রী অপসারণ করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৬ শাখা। এর আগে, ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী সারা দেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, গেট, তোরণ ইত্যাদি প্রচারণা অপসারণের জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে টিম গঠন : দেশের জনগণের কাছে নিজেদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এই টিম জেলা পর্যায়ে ও মেট্রোপলিটন এলাকায় কাজ করবে।

পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে কি না, অথবা ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না বা নির্বাচনী প্রচারণা ও ব্যয় বাবদ নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কি না অথবা অন্যান্য বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা সরেজমিনে পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেবেন। আচরণবিধিমালা ভঙ্গের কোনো বিষয় নজরে আসা মাত্রই নির্বাচনী তদন্ত কমিটিকে জানাতে হবে। অন্যান্য নির্বাচনী বিধিনিষেধ ভঙ্গের ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে ফৌজদারি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করা যাবে। প্রয়োজনে উদ্ভূত সমস্যাবলি তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর তিন দিন অন্তর অন্তর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিতে হবে। প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা তাদের পক্ষে অন্য কেউ আচরণ বিধিমালার কোনো বিধি ভঙ্গ করলে বা ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বা বিধিমালার কোনো বিধি বিশেষ করে নির্বাচনী ব্যয়সংক্রান্ত বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের সদস্যসহ সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নির্বাচনী এজেন্টকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে। এই বিধান ভঙ্গের দায়ে প্রদেয় শাস্তি বিশেষ করে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলকরণের বিষয় অবগত করানো নিশ্চিত করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close