ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’

ফরিদপুরে প্রকল্পের টাকা লুটপাট বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকরা

ফরিদপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি শিক্ষকদের বেতন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।

সমাজের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্যই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে প্রকল্পটি চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

এ প্রকল্পে ফরিদপুরের সদর, ভাঙ্গা, সদরপুর, মধুখালী উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ‘এসো জাতি গড়ি’ (এজাগ) সংস্থা। লিড এনজিও এজাগ পার্টনার হিসেবে সুর্যমুখীসহ কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়।

জানা গেছে, ভাঙ্গা ও সদরপুরসহ প্রতিটি উপজেলায় ৭০টি করে কেন্দ্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে চুক্তিবদ্ধ ‘এসো জাতি গড়ি’। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রতি ১৫ কেন্দ্রের জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়ার কথা।

তবে প্রকল্পের মেয়াদ ১১ মাস অতিবাহিত হলেও বাস্তবে কোথাও পাঠদান করানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। শিক্ষকদের বেতন, বিদ্যালয়ের উপকরণ, শিক্ষার্থীদের পোশাক, বিদ্যালয়ের জন্য ঘরভাড়াসহ যাবতীয় অর্থ আত্মসাৎ করছে সংস্থাটি। এভাবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের নামে কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, কথিত রিসোর্স পারসন, ট্রেইনার, কর্মকর্তা নিয়োগ, মাস্টার রোলে ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছে এনজিওটি। প্রতিটি কেন্দ্রে তিন হাজার টাকা বাজেটে একটি করে ফ্যান, টিউব লাইট, পানির জার, স্টিলের ট্রাংক, সাইনবোর্ড, হাতলওয়ালা চেয়ার, টুল, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, শিক্ষা উপকরণ এবং খেলার উপকরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এর কিছুই কেনা হয়নি।

প্রকল্পের শুরুতেই কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও মানা হয়নি সে নিয়ম। ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রী ক্রয় না করে অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের কয়েক কোটি টাকা তুলে নিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওটি। অথচ শুরু থেকে গত ১১ মাসের বেতন-ভাতা পাননি কোনো শিক্ষক। এ নিয়ে খোদ কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষক জানান, প্রকল্পের পরিচালক আমাদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। স্টাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে বেতনসহ পাওনাদি না দিয়ে টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছেন।

ভাঙ্গায় এ প্রকল্পের শিক্ষক সুলেখা আক্তার, সুমী খাতুন কনা, ছালেহা বেগম, সবুজ মোল্লা, রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, আমরা এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাইনি। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। বেতন-ভাতা না পেলে আমরা কীভাবে চলব।

অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে ‘এসো জাতি গড়ি’ (এজাগ) সংস্থার অধীনে ভাঙ্গায় কর্মরত এনজিও ‘নারী বিকাশ কেন্দ্রে’র নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

ভাঙ্গা উপজেলার প্রকল্পের ম্যানেজার নিতাই চন্দ্র দে জানান, আমরা শিক্ষকদের দাবিগুলো নিয়ে প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের পাওনাসহ আমার পাওনাদিও পাইনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আনা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close