কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

নৌকা পেতে মরিয়া সবাই

চট্টগ্রামে মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে প্রভাবশালী অনেক নেতা

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ২১৩ জন। দু-একটি আসন ছাড়া প্রায় সব আসনেই এবার মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে আছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতা। বিশেষ করে নগরীর প্রেস্টিজিয়াস আসন বলে পরিচিত চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ এই তিনটি আসনে রীতিমতো বিভ্রান্তকর অবস্থা। আসনগুলোতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেউ এককভাবে নিশ্চিত হতে পারছেন না। তাই প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই একাধিক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আনোয়ারার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ দুটি আসনে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য অন্য কোনো প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নেননি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আসন বলে পরিচিত চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (পাঁচলাইশ-ডবলমুরিং) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)। এসব আসনে মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন সেদিকেই সবার নজর।

চট্টগ্রামে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান নওফেল মন্ত্রী হলেও আরো দুজন রাজনৈতিক নেতা ব্যাপক সক্রিয়। তাদের একজন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, অপরজন নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এ দুজন মনোনয়ন পাবেন কিনা মনোনয়ন পেলে কোন আসন থেকে পাবেন এ নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই।

সূত্র মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য আছেন মহিবুল আসান নওফেল। তিনিও এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে নাছিরের পাশাপাশি মনোনয়ন নিয়েছেন সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। চট্টগ্রাম-১০ আসনে দুজনের বাইরে আরো সক্রিয় আছেন সম্প্রতি উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু। এছাড়া আছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনে নির্বাচিত হওয়া এম এ লতিফ এমপি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসনগুলোতে আসন্ন নির্বাচনে কি পুরোনো মুখই বহাল থাকবে নাকি নতুন মুখ আসবে। বলা হচ্ছে, এ তিনটি আসনে মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে দলের হাইকমান্ডের ওপর। সূত্র মতে, চট্টগ্রামে এবার নৌকার মনোনয়ন পেতে ২২১টি ফরম বিক্রি হয়েছে। আয় হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। সবচেয়ে বেশি ফরম বিক্রি হয়েছে নগরীর ৪টি আসনে। গুরুত্বপূর্ণ আসন বলে পরিচিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চসিক আংশিক), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (পাঁচলাইশ-ডবলমুরিং) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে গড়ে ২০টিরও অধিক ফরম বিক্রি হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ৪ আসনে ৭৯টি ফরম বিক্রি হয়েছে।

নগরীর ২টি আসনে উপরোক্ত প্রার্থী ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এমপি হওয়ার দৌড়ে আছেন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান নওফেলের পাশাপাশি প্রার্থী তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাস, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল, মশিউর রহমান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১০ আসনে সম্প্রতি উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া সংসদ সদস্যে মহিউদ্দিন বাচ্চুর পাশাপাশি আছেন এম এ আজিজের সন্তান সাইফুদ্দিন খালেদ, প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, সাবেক ছাত্র নেতা কে বি এম শাহজাহান।

নগরীর কিছু অংশ নিয়ে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন)। আসনটিতে সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র মুজিবর রহমান, প্রয়াত বাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদলের পত্নী সেলিনা খান, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ দুই ডজন নেতা মনোনয়ন চেয়েছেন।

নগরীর বাইরের আসনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পাশাপাশি তার ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। উল্লেখযোগ্য আরো আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটসহ বেশ কয়েকজন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়নপত্র নেওয়া উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ দেড় ডজন প্রার্থী।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. রাজিবুল আহসানসহ ডজন খানেক প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের পাশাপাশি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূইয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ ইমরান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুনসহ ডজন খানেক প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও সিটি করপোরেশনের আংশিক) আসনে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউনুস গনি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বাসন্তী প্রভা পালিতসহ দেড় ডজন প্রার্থিতা চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতসহ ৮ জন মনোনয়ন চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালীর আংশিক) আসনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপিসহ ২ জন ফরম নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ছাড়াও নিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলমসহ দেড় ডজন প্রার্থী ফরম নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পাশাপাশি তিনজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার একাংশ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর পাশাপাশি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, শিল্পপতি মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ূম চৌধুরীসহ ১৭ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার একাংশ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীসহ ডজন খানেক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি ১৯ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close