প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩১ মার্চ, ২০২৩

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

বিশ্ব নিয়ে শি জিন পিংয়ের ভাবনা

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সম্প্রতি রাশিয়া সফর করেছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকে চীনের এ নেতা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক, এমন সহযোগিতার ব্যাপারে কথা বলেছেন। শি জিং পিং বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বের পতন অনিবার্য। তিনি চান, ‘বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য গড়ে উঠুক অর্থাৎ এমন চুক্তি হোক, যা সব পক্ষের জন্যই লাভজনক। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিশ্বকে ক্ষমতার নতুন মেরূকরণে গড়তে চান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং। কিন্তু সামনে রয়েছে তার নানামুখী চ্যালেঞ্জ।’ খবর : দ্য ইকোনমিস্টের।

ইউক্রেন ইস্যুতে চীন এক খেলায় মেতেছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। তা হলো চীনের প্রতি রাশিয়ার আনুগত্য নিশ্চিত করতে চান শি জিং। তবে পুতিনের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো অতটা দুর্বল অবস্থায়ও রাশিয়াকে দেখতে চান না তিনি। পাশাপাশি বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখাতে চায় বেইজিং। এ ছাড়া তাইওয়ান প্রশ্নে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ন্যায্যতাকে খর্ব করতে চায় চীন। আর সামরিক ব্যবস্থাকে পররাষ্ট্রনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় দেশটি।

শি জিং পিং ইউক্রেনের জন্য এমন একটি শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন, যাতে শেষমেশ রাশিয়ারই লাভ হবে। শি জিং ভালো করেই জানেন, ইউক্রেন প্রস্তাবটি মেনে নেবে না। এ প্রস্তাবের আওতায় সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। তবে রাশিয়া যে দেশটির (ইউক্রেনের) ছয় ভাগের এক ভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে তা নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

চীন যে নতুন পররাষ্ট্রনীতিতে চলছে, এটি হচ্ছে তার একটি মাত্র উদাহরণ। গত ১০ মার্চ চীনের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরী দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছে। গত ১৫ মার্চ ‘গ্লোবাল সিভিলাইজেশন’ নামের উদ্যোগ উন্মোচন করেন শি জিং পিং। এতে বলা হয়েছে, অন্যদের ওপর নিজস্ব মূল্যবোধ ও মডেল চাপিয়ে দেওয়া এবং মতাদর্শগত সংঘাত থেকে দেশগুলো বিরত থাকতে হবে।

চীনকে বিশ্বসেরা করার চেষ্টা : চলতি মাসের শেষের দিকে শি জিংয়ের সঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার বৈঠকের কথা ছিল। তবে সিলভার অসুস্থতার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। সম্ভাব্য সে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলভা বহুমুখী বিশ্ব গড়ার পক্ষের মানুষ। তিনি চান, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার ক্ষেত্রে চীন সহযোগিতা করুক।

অনেকে মনে করেন, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈতনীতি প্রকাশ পেয়েছে। আর চীন এ বিষয়ের ওপরই জোর দিচ্ছে। ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে এশিয়াকে প্রাধান্য দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য অঞ্চলে সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের পদক্ষেপ বেছে নিয়েছে। তবে অনেক দেশই এ যুদ্ধের বিরোধী। তারা এ যুদ্ধের অবসান চায়। কমপক্ষে ১০০টি দেশ পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেনি। মোট বৈশ্বিক জিডিপির ৪০ শতাংশ এসব দেশ থেকে আসে। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্টিস কেউ-ই ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে না। এতে তুরস্ক থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সর্বোপরি চীনের জন্য জায়গা তৈরি হবে।

চীনের বার্তা হলো, প্রকৃত গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অঙ্গীভূত করে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে না। এ বার্তাকে অগণতান্ত্রিক দেশগুলোর অভিজাত ব্যক্তিরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন।

তবে চীন যে মুনাফাভিত্তিক বহুপক্ষবাদের লক্ষ্যে হাঁটছে তা আদৌ পূরণ হবে কি না মূল্যায়ন করা জরুরি।

১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের পর থেকে ইরান ও সৌদি আরব একে অপরের ঘোর শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই দুই দেশের জন্যই চীন সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। এ কারণে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে বেইজিং। চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে হয়তো ইয়েমেনে এ দুটি দেশের ছায়াযুদ্ধের মাত্রা কমে আসতে পারে।

ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে চীনকে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সম্মতি নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় জবাবদিহির বিষয়টিও এক্ষেত্রে জড়িত। আরেকটি হামলা না হওয়ারও নিশ্চয়তা দিতে হবে।

শি জিং পিয়ের সামনে চার চ্যালেঞ্জ : বৈশ্বিক নানা নীতি শুধু পশ্চিমা স্বার্থকে রক্ষা করে, এমন সব অভিযোগকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং চীন ও রাশিয়া যে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছে, তার প্রকাশ করাটাই হবে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।

১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল, দীর্ঘস্থায়ী জোট গঠন ও সাধারণ নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের আরো বেশি করে নিরাপদ করতে পারবে। তবে গত কয়েক দশকে ইরাকসহ বিভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তবে দুই নেতার মস্কো সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যা প্রকাশ পেয়েছে, তা এর চেয়ে খারাপ। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভালোবাসা জয় না করেই একটি শক্তিধর দেশ প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে। আস্থা অর্জন ছাড়াই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চাইছে। সর্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত না করেই বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close