বগুড়া প্রতিনিধি

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ফুলকপি ২ টাকা কেজি

দেড় থেকে দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি। এতে উৎপাদন খরচ দূরে থাক, সবজি হাটে নিয়ে আসার পরিবহন খরচও উঠছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শুধু ফুলকপি নয়, বাঁধাকপিরও দাম নেই বললে চলে, প্রতিপিচ বাঁধাকপি ৬ থেকে ৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা। তবে পাইকারি বাজারে দাম কম হলেও খুচরা বাজারে দাম দ্বিগুণেরও বেশি। রবিবার ও সোমবার বগুড়ার মহাস্থান হাট, শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতবদলেই বাড়ছে সবজির দাম। পাইকারি হাটের চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা আবার কখনো দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাইকারি হাট বগুড়ার মহাস্থানে শীতকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্রেতাণ্ডবিক্রেতাদের।

ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম একেবারেই কমে আসায় উৎপাদন খরচ নিয়ে শংকায় চাষিরা। তবে এ হাটের সবজি শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ রাজধানী ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে হাটবাজারের খাজনা, লেবার ও যানবাহন খরচ সবমিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়ে যায় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শস্যভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় গোটা বছর সবজি চাষ হয়ে থাকে। তবে শীতকালীন সবজি বেশি উৎপাদন করে থাকে চাষিরা। বগুড়া জেলায় গোটা বছরে সাড়ে ৪ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়, অক্টোবর থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতকালীন মৌসুমে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে এবার লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৩ লাখ টন। এসব সবজি বিক্রির সবচেয়ে বড়হাট মহাস্থান, বগুড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা সবজি বিক্রি করতে আসে এখানে। সকালে জমি থেকে তোলা টাটকা সবজি মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে যাচ্ছে বগুড়াশহর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

রবিবার মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি আলু ১৩ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হলেও বগুড়া শহরের বাজারে তা ১৮ থেকে ৩০ টাকা, ফুলকপি প্রতি কেজি দেড় থেকে ২ টাকা টাকা হলেও শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজারে তা ১০ থেকে ১৫ টাকা আবার কোথাও ২০ টাকা কেজি। বাঁধাকপি প্রতিপিচ ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হলেও মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তা দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মহাস্থান হাটের চেয়ে বগুড়ার বাজারে সবধরনের সবজি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এসব সবজি পাইকারি বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। মহাস্থান পাইকারি হাট থেকে এসব সবজি হাতবদল হচ্ছে একাধিকবার। চাষির কাছ থেকে পাইকারি ক্রেতা, বাজারের আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে সাধারণ ভোক্তার কাছে হাতবদলেই দাম বেড়ে যাচ্ছে।

শিবগঞ্জের মেদিনীপাড়ার লুৎফর রহমান, আমজানির ছাইফুল ইসলাম, আবদুল হান্নান জানান, গত কয়েকদিন ধরে ফুলকপির দাম নেই বললেই চলে। গত সপ্তাহে প্রতি মন ১০০ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি হলে চলতি সপ্তাহে তা ৫০ থেকে ৭০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অনেকসময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা দামই বলে না। তাই উৎপাদন খরচ তো দূরেই সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা জানান, ফুলকপি বাঁধাকপির দাম একেবারেই নেমে এসেছে। অপরদিকে আলুর দামও বেশ কম, দাম বাড়লে কৃষক উপকৃত হবে বলে তারা জানান। এদিকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজারসহ অন্যান্য বাজারের চিত্র ভিন্ন। মহাস্থান হাট থেকে আনা এসব সবজি প্রতিকেজি ৫ থেকে ১০ টাকা আবার কখনো দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতারা বাজার মনিটরিং করার দাবি জানিয়েছেন।

মহাস্থান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব সবজি ট্রাকে করে নিতে পরিবহন খরচ, খাজনা, শ্রমিক খরচ মিলে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা খরচ হয় বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ী মাইনুল আহসান ও ইব্রাহিম হোসেন। তারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কখনো সবজির দাম বাড়িয়ে দেয় না এটা খুচরা পর্যায়ে বাড়িয়ে দেয়। এদিকে শহরের বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মহাস্থান হাট থেকে আনা সবজি বাছাই করে তারা বিক্রি করেন। ভালো এবং টাটকা সবজি বাছাই করতে তাদের ঘাটতি হয়, এছাড়া পরিবহন, খাজনা, লেবার খরচ সবমিলিয়ে দাম বেড়ে যায়।

বগুড়া রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ, পাইকারি হাট থেকে খুচরা বাজার হয়ে ভোক্তার কাছে পণ্য বাছাই করে পৌঁছাতে বিভিন্ন খরচ হয়। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুব সামান্য মুনাফায় ব্যবসা করে। অযথা খুচরা পর্যায়ে ও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে দিলে তা প্রশাসনের সহযোগিতায় মনিটরিং করা হবে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) এনামুল হক জানান, চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রতিবছর সবজি চাষ করে থাকে। এবারো রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চাষ হয়েছে। ফুলকপি শীতকালীন সবজি, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগানো যায় যা মার্চ পর্যন্ত পাওয়া যায়। জেলায় এবার সাড়ে ১২শ হেক্টর জমি থেকে ৩৭ হাজার ৫০০ টন উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান। বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ হাজার খরচ করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেন চাষিরা। বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানসহ প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close