মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২

২ সেতুতে মানুষের স্বপ্নপূরণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হরিণখাইয়া, বাঁকখালী ও ছাগলখাইয়া দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এই এলাকার মানুষ সমতল জেলার একটি উপজেলার মাধ্যমে যোগাযোগ করে আসছে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর দুর্গম এলাকার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর। এখন মুহূর্তের মধ্যে বাইশারী ও দোছড়ি ইউনিয়নের মানুষ পরিবহনযোগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে নেমে আসা বাঁকখালী নদীর ওপর ১২৮ মিটার ও ছাগলখাইয়ায় ৬৪ মিটার দুটি সেতু বদলে দিয়েছে অর্ধলাখ মানুষের জীবনযাত্রা। স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর গ্রীষ্ম মৌসুমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হতো মানুষের। বর্তমানে সেতু নির্মিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচল অনেক সহজ হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নে কৃষি পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত সহজতর হয়েছে। অনেক পরিবারে ফিরেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, বেড়েছে জমির দাম।

আগে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে খরচ পড়ত দ্বিগুণ, লাভ হতো কম। কৃষকদের উৎপাদিত পেঁপে, আম, কলা, রাবারসহ বিভিন্ন শাকসবজি কাঁচামাল বাজারজাত করার আগেই নষ্ট হয়ে যেত। অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পড়তে হতো চরম ভোগান্তিতে। স্থানীয়দের এসব এলাকা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বাইশারী ও কক্সবাজার আসতে হলে ঘুরতে হতো দীর্ঘপথ। আর বাঁকখালী নদী ও ছাগলখাইয়ায় দুটি সেতু নির্মাণের ফলে মানুষ এখন এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে।

এদিকে দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান বলেন, সেতু হওয়াতে বাঁকখালী ও দোছড়ি দুটি মৌজার মানুষের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। বাড়বে নাগরিক সুবিধা। তবে বাঁকখালী সেতুর শেষ অংশে রাস্তার বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম বলেন, একসময় এখানকার মানুষের উপজেলায় যেতে কয়েক দিন আগে প্রস্তুতি নিতে হতো। বাজারে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। কিন্তু এখন মুহূর্তের মধ্যে গাড়িযোগে সেতু পার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। অবহেলিত জনপদ ও দুর্গম এলাকায় এ উন্নয়নের মহাযজ্ঞের কারণে এরই মধ্যে জমি-জমার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। পাল্টে যাচ্ছে এলাকার চেহারা। সেতু দুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দুর্গম এলাকার মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, ২০২০ অর্থবছরে বাইশারী-দোছড়ি সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৬ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৮২৮ টাকা ব্যয়ে ১২৮ মিটার ও ছাগলখাইয়া এলাকায় ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ টাকায় ৬৪ মিটার সেতুর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। বর্তমানে কাজ শেষে সেতু দুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে জনগণের সুবিধার জন্য উদ্বোধনের আগেই সেতু দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, বাইশারী-দোছড়ি সড়কে ১০ কোটি টাকায় দুটি সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতু নির্মিত হওয়ায় বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হয়েছে, দূরত্বও কমেছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে এখানকার মানুষের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close