নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অনিশ্চয়তা দূর হচ্ছে

দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ট্রাস্টে জনবল ন্যস্তকরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভা এবং পরে জাতীয় সংসদে পাস হলেও নানা জটিলতার কারণে আইনটির বাস্তবায়ন থমকে গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) কর্মজীবন নিশ্চিত করা হয়েছে। হেলথ প্রোভাইডাররা দেশে প্রচলিত অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরতদের মতো স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি, অবসরভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো জানান, ট্রাস্ট আইন সম্পর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সেগুলো হলো ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি আইন দ্বারা সৃষ্ট পদ বিধায় এটি ট্রাস্টে ন্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। ট্রাস্ট আইন জারির তারিখে যেসব পদ শূন্য ছিল, সেসব পদ এবং জনবল ন্যস্ত করা যাবে না। ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস অব বাংলাদেশ (আরসিএইচসিআইবি)’ শীর্ষক প্রকল্প এবং ‘কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)’ অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় নিয়োজিত ১৩ হাজার ৯৪৯টি পদে কর্মরত জনবলসহ ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’-এ ন্যস্ত করার বিষয়ে বেশ কিছু শর্তে প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করতে হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ট্রাস্ট আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে সরকার দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাস করে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদের চাকরি জাতীয়করণের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে তাদের চাকরি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০২২ সালের ৬ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের ৬২টি আপিলের ওপর রায়ের জন্য নির্ধারিত দিনে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

ট্রাস্টি বোর্ড গঠন : দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে সভাপতি করে ১৫ সদস্যের কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছে সরকার। এই ট্রাস্টি বোর্ডের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। তবে বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মনোনীত যেকোনো সদস্যকে কারণ দর্শানো ছাড়া দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে সরকার। পূর্ণাঙ্গ ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ছাড়াও সহসভাপতি করা হয়েছে ডা. মাখদুমা নার্গিসকে। আর ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। জনকল্যাণমূলক এই প্রকল্পটি ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয়। প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করে ফেলে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গত ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি আবার চালু করে। এখান থেকে দেশের লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন।

সরকারি হিসাবে সারা দেশে ১৩ হাজার ৮৮১টি ক্লিনিক চালু অবস্থায় আছে। এসব ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৩০ জন মানুষ সেবা নেয়। আরো ১৪৬টি ক্লিনিক চালুর অপেক্ষায় আছে। ক্লিনিক থেকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং সাধারণ আঘাতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্লিনিকে শিশু ও মায়েদের টিকাদানের ব্যবস্থা আছে। ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। স্বাস্থ্য-শিক্ষার পাশাপাশি দেওয়া হয় পুষ্টি শিক্ষা। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অণুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close