ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা)

  ০১ অক্টোবর, ২০২২

ভারতে বন্দি বাংলাদেশি ১০৭ জেলেকে ফেরানোর দাবি

গভীর সমুদ্রে তিন দফা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ১০৭ জেলে। ওই সময় ঝড়ের কবলে পড়েন তারা। ঝড়ে ট্রলার ডুবে ও ইঞ্জিল বিকল হয়ে ভাসতে ভাসতে দেশের জলসীমা অতিক্রম করে ভারত সীমান্তে চলে যান তারা। সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

তাদের আটক করে। এখন বাংলাদেশের ১০৭ জেলে ভারতীয় আশ্রয়ণে ও কারাগারে। কারাগারে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছে ট্রলার মালিক সমিতি, আড়তদার সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ও ভুক্তভোগীদের পরিবার। তাদের অভিযোগ, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশন সহযোগিতা করছে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

গত ১৮ আগস্ট গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট ও ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার ৯০ জন জেলে। ঝড়ের কবলে পড়ে ইঞ্জিল বিকল হয়ে ভাসতে ভাসতে তারা এখন ভারতের দক্ষিণ চব্বিশপরগনা জেলার কাকদ্বীপ, ক্যানিং, রায়দিঘী, মইপিঠ এলাকার বিভিন্ন আশ্রয়ণে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন। এরমধ্য বরগুনা ও পাথরঘাটার ৩৪ জন জেলে রয়েছেন। এসব জেলে এখন না খেয়ে দিন পার করছেন। অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এমনটা জানিয়েছেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।

এর আগে আরেক দফা গত ১৫ আগস্ট গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে বরগুনার পাথরঘাটার এফবি ফাতেমা নামে একটি ট্রলার ইঞ্জিন বিকল হয়ে দেশের জলসীমা অতিক্রম করে ভারত সীমান্তে চলে যায়। ভারতের চব্বিশপরগনা জেলার ছোট মোল্লা খালী কোস্টাল এলাকা থেকে ট্রলারটিতে থাকা ১১ জেলেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে ভারতের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। আটক এসব জেলে ভারতে বারুইপুর কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থাকা ১১ জেলের মুক্তির দাবিতে গত ২৫ আগস্ট বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ভারতের উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। উচ্চ আদালত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নিম্ন আদালতে প্রেরণ করে। এ ছাড়া এর আগে ২০১৯ সালে জলসীমা অতিক্রম করে ভারত সীমান্তে চলে যায় বাংলাদেশি ৬ জেলে। এসব জেলে এখন ভারতে বারুইপুর কারাগারে ৩ বছরের সাজা নিয়ে বন্দি রয়েছেন।

ভারতে আটকে পড়া জেলেদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গত ২২ আগস্ট বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) সামনে মানববন্ধন করেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতি, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার সমিতি ও পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাইকার সমিতি ও বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন এতে অংশ নেন কয়েক হাজার জেলে ও পরিবার। এ সময় বক্তারা ভারতে আটকে থাকা জেলেদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ঝড়ের কবলে ভেসে যাওয়া ৯০ জেলে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে থাকলেও বাংলাদেশের হাইকমিশনের সহযোগিতার অভাবে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভারতে আটকে থাকা পাথরঘাটার ১৭ নিখোঁজ জেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে পাথরঘাটা উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১৭ জেলে পরিবার। এ সময় ভারতে আটকে থাকা জেলেরা ভিডিওবার্তায় গণমাধ্যম কর্মী ও পরিবারে সঙ্গে দেশে ফেরার আবেদন জানান।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (পূর্ব), পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যমন্ত্রী, ফিশারি ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর, দক্ষিণ চব্বিশপরগনার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশি জেলেদের ফেরত পাঠানোর আরজি জানিয়েছে ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘শখানেকের বেশি বাংলাদেশি জেলে এখানে আটকে আছে। তাদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা ভালো কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না।’

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশি জেলেরা ভারতে প্রবেশ করলে তাদের মামলা দিয়ে জেলহাজতে রাখা হয়। বছরের পর বছর বাংলাদেশি জেলেরা ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অথচ ভারতের জেলেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও ইচ্ছা করে বাংলাদেশি জলসীমায় অনুপ্রবেশ করলেও তাদের সসম্মানে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের জেলেদের বেলায় যত আইন। আটক জেলেদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতাই দেখছেন না তারা। তিনি আরো বলেন, ট্রলার ডুবে এখনো কয়েকশ জেলে নিখোঁজ। তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারা মারা গেছেন, না জীবিত আছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবে ও ইঞ্জিল বিকল হয়ে ১০৭ জন জেলে ঢেউয়ের তোড়ে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। এসব জেলে এখন ভারতের কারাগারে ও আশ্রয়ণে। ভারতে আটক বাংলাদেশের জেলেদের ফিরিয়ে আনতে আমরা বারবার দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘জেলেদের আকুতি দেখে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দেশে পাঠানোর ব্যাপারে আন্তরিক। তবে দুদেশের পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা জরুরি বলে মত দেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে আটকে পড়া জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনা বিলম্বিত হচ্ছে। আটকে থাকা জেলেদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় বলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close