আইনের ছাত্র। কোর্ট-কাছারি নিয়েই দৌড়ঝাঁপ। হয়তো বিচারক নয়তো আইনজীবী অথবা আইন-সংক্রান্ত কোনো পেশায় যুক্ত হলে ছুটতে হবে আদালতের দিকেই। আইন পড়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশই বেছে নেয় আইনি পেশাই। তো পেশা বেছে নিতে হলে তো এসব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবেই। তাই আদালত ভবনের দিকেই পথচলা শুরু। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিন ক্যাম্পাস বন্ধ। ফরমাল পোশাক গায়ে বন্ধুরা মিলে গেলাম কুষ্টিয়ার আলাদত ভবনের দিকে। বাস থেকে নেমেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আর সেটি পেরিয়েই মূল গন্তব্য।

ক্লাসে শিক্ষকরা প্রায়ই বলতো, আদালতের বারান্দায় ঘুরলেও অনেক কিছু শেখা যায়। আসলেই তাই। সেখানে আসামি, চোর, ভদ্রলোক, আইনজীবী, বিচারকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে দেখা মেলে। তবে কথা বলার সুযোগ কম। সবাই নিজের মতো ব্যস্ত। সেসব ব্যস্ততার মধ্যেই কয়েকজন আইনজীবী ও বিচারকের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হলো।

গায়ে জ্বর। আদালতে যাব কী যাব না এ নিয়ে কনফিউশন। সকালে মনে হলো জ্বর কমেছে। যাই একটু ঘুরে আসি। জীবনে প্রথমবার কোর্টে যাওয়া। অভিজ্ঞতার সুধা পান করে আসি। চটপট রেডি হয়ে বেরিয়েও পড়লাম। আদাতলে প্রথমবার। একঝাঁক তরুণ-তরুণী দেখে আইনজীবী, বিচারকদের বুঝতে বাকি রইল না আমরা কারা। তবু আগ্রহ সহকারে আইনজীবীরা জিজ্ঞেস করছেন পরিচয়। এমনকি দুজন বিচারক ডেকেও নিলেন খাস কামরায়। উদ্বুদ্ধ করলেন আমাদের। অবশ্য তারাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। এখান থেকেই পাস করে আজ আইনজীবী ও বিচারকের আসনে।

প্রথম দিকেই বিভাগের এক সিনিয়র আপুর বাবার সঙ্গে দেখা। তিনি আনজীবী। আমাদের বুঝিয়ে দিলেন অনেক কিছুই। এর কিছুক্ষণ পরই জেলা ও দায়রা জজের বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আমাদের দিকনির্দেশনা দিলেন কীভাবে ভেতরে যেতে পারি। সেখানে বিচারকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢুকে পড়লাম এজলাসে। বসলাম পেছনের সাড়িতে। বিচার চলাকালে বিচারিক বিভিন্ন কার্যক্রম মেলাতে চেষ্টা করলাম যেসব আইন পড়েছি তার সঙ্গে। সব না পারলেও বেশ কিছু বিষয় মেলাতে পারলাম। চাক্ষুষ প্রথমবার বিচারকার্য অবলোকন করলাম।

সেখানে কিছুক্ষণ থেকে বের হলাম। ঢুকলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে। সেখানে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঘুরঘুর করছিলাম আশপাশে। বুঝতে পারছিলাম না ভেতরে যেতে পারব কি না। মন আনচান করছে ভেতরে কী হচ্ছে একটু দেখে আসি। হঠাৎই এক আইনজীবী ডেকে বললেন, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? আমরা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গিয়েছি শুনেই মুচকি একটা হাসি দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। জানতে চাইলেন ভেতরে যেতে চাই কি না। জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে মন পুলকিত হয়ে উঠল। ভাইয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বলে ফেললাম, ‘জি ভাই।’ তিনি এজলাসের ভেতরে প্রবেশ করে অনুমুতি নিলেন বিচারকের। এদিকে আমাদের আর তড় সইছে না। উঁকি মারছিলাম বারবার। বিচারক অনুমুতি দিতেই ঢুকে পড়লাম এজলাসে।

তখন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। বিচারকের আসনে ছিলেন আবদুল কুদ্দুস ভাই। ভাই বলার কারণ তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই বড় ভাই। শুনানি শেষ করে আমাদের ডেকে নিলেন খাস কামরায়। নাশতা করালেন। বড় ভাই হিসেবে বিভিন্ন পরামর্শ দিলেন।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন থেকে বেরিয়ে গেলাম সিনিয়র সহকারী জজের (সিভিল) এজলাসে। সেখানে বিচারক ছিলেন আজহারুল ইসলাম রিমন স্যার। কিছুক্ষণ দেখলাম সিভিল মামলার হালচালও। যখন ঢুকলাম তখন ২০১৫ সালের একটি মামলার শুনানি চলছিল। এজলাসের পেছন সাড়িতেই বসলাম সেখানেও। পাশেই বসা বিবাদী। এদিকে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আর বিবাদী হতাশার নিঃশ্বাস ফেলছে। তার ভাষ্য, আর কত দিন চলবে এক মামলা! ৭/৮ বছর হলো। যাই হোক। সেখানে কিছু সময় থেকে বেরিয়ে পড়লাম। এ ছাড়া যেসব বিচারক ও আইনজীবীর কাছেই গিয়েছি। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করেছিলেন। তাই পুলকিতই ছিলাম।

সারা দিন ছোটাছুটিতে যেমনি ক্লান্ত তেমনি পেটে ক্ষুধা। তবে ক্ষুধা আঁচ করতে পেরেছি চলে আসার সময়। আলাদত এলাকা থেকে বেরিয়া কুষ্টিয়াতেই একটি রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলাম। তারপর ক্যাম্পাসের পথে। দিনটি সবমিলিয়ে ভালোই গেল। দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরলেও তৃপ্তির ঢেকুর। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভারী করতে পেরেছি ভেবেই ভালো লাগে। আর এই অভিজ্ঞতার ভাগ অবশ্যই বিভাগের শিক্ষকদের দিতে হয়। তাদের দিকনির্দেশনায় প্রথমবার আদালতে যাওয়া। তবে প্রথম হলেও এটিই শেষ নয়। আবার ফিরতে হবে আদালতের বারান্দায়। হয়তো সেটিই হতে পারে পরবর্তী পরিচয়।

"