সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
কনটেন্ট থেকে করপোরেটের জগতে রাফাত
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির। প্রযুক্তিগতভাবে কোন জাতি যতটুকু উন্নত, সেই জাতির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান ঠিক ততোধিক উন্নত। প্রযুক্তিনির্ভর আজকের বিশ্বে, প্রায় সবার হাতেই রয়েছে মুঠোফোন। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো ধরনের কাজকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় সবার কাছেই রয়েছে নানান ইলেকট্রনিক ডিভাইস। কিন্তু, হাতের মুুঠোয় প্রযুক্তিকে আঁকড়ে ধরে রাখলেই, কারো ব্যক্তিগত কিংবা কোনো জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয়ে উঠে না। প্রয়োজন হয়, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের। এর জন্য, বরাবরই প্রযুক্তিগতভাবে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। দেশ ও জাতির মানবসম্পদে পরিণত করতে হয় নিজেকে।
আধুনিক বিশ্বের সাইবার জগতে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে কনটেন্ট রাইটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মূলভিত্তিই হলো কনটেন্ট রাইটিং। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষের কাছে ‘কনটেন্ট রাইটিং’ প্রাত্যহিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কনটেন্ট রাইটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী রাফাত হাসান। ক্ষুরধার মস্তিষ্কের এই মানুষটি কনটেন্ট রাইটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং জগতে অনন্যসাধারণ প্রতিভা হিসেবে পরিচিত। মেধাবী এবং পরিশ্রমী মানুষটির মার্কেটিং সেক্টরে রয়েছে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি। অতি সাধারণ বিষয়বস্তুকে নিজের লেখনীর মাধ্যমে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে নিয়ে গেছেন রাফাত। ভিন্নধর্মী এই দৃষ্টিভঙ্গিই মার্কেটিং জগতে রাফাতের অনন্য মগজাস্ত্র।
রাফাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এবং কলেজে। স্কুলপর্যায়ে তৎকালীন পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পেয়েছেন রাফাত। পরে বাবার চাকরিজীবনে অবসরপ্রাপ্তি হলে সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন রাফাত। বিদ্যালয়ের নবমণ্ডদশম শ্রেণি পড়েছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে। পরে কৃতিত্বের সহিত উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন ঢাকার নৌবাহিনী কলেজ থেকে। উল্লেখ্য, সে বছর ঢাকা নেভি কলেজ থেকে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীরই সব বিষয়ে এ (+) এসেছিল, সেই তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে রাফাতও একজন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদে ভর্তি হন রাফাত। সংস্কৃতিমনা রাফাত বাকৃবির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে যুক্ত হন রাফাত। এর মধ্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। এ ছাড়া প্রতি বছর অনুষদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে মঞ্চাভিনয় করে এসেছেন রাফাত। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার তৈরি স্ক্রিপ্ট এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। ক্ষুরধার লেখনী গুণসম্পন্ন রাফাত তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত সময়ে বাকৃবির শিক্ষার্থী সামীর আহমেদ সোহান এবং আবুল বাশার বিপুলের সঙ্গে টিম ‘বাউএলসি অরবিট’ গঠন করেন এবং ল্যাঙ্গুয়েজ লিগ ২০১৯ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করে প্রায় ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাস্ত করে স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাফাত ‘ব্লু প্রিন্ট অব কনটেন্ট ক্রিয়েশন’ কোর্সের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি দেশের তরুণ, উদ্যমী গ্রুপ থেকে দক্ষ কনটেন্ট নির্মাতাদের বের করে আনতে কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি, স্মার্টিফায়ার অ্যাকাডেমিতে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের অনন্য প্ল্যাটফরম জাতীয় সংবাদপত্র অলিম্পিয়াডে ‘কনটেন্ট লিখনী’র প্রধান হিসেবে নিযুক্ত থেকেছেন। এ ছাড়া তিনি ‘সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট’ সৃজনী দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত থেকেছেন।
বর্তমানে, রাফাত হাসান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে এমবিএ কোর্সে (মার্কেটিং মেজর) ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া স্নাতক সম্পন্ন করার পরই রাফাত ‘নেক্সট ভেনচার্স’ নামক একটি বুটস্ট্র?্যাপ কোম্পানিতে কমিউনিটি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন, যেটি কি না বাংলাদেশের ফিনটেক ইউনিকর্ন হিসেবে খ্যাতি অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। কোম্পানিতে জয়েনিংয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই অভূতপূর্ব সাফল্যের মুখ দেখেন রাফাত। নেক্সট ভেনচারস কর্তৃক মাসব্যাপী ‘কি পারফরম্যান্স ইনডিকেটর’-এ বরাবর সেরা থেকেছেন রাফাত। এ ছাড়া প্রতিবছর উদযাপিত নেক্সট স্টেলার অ্যাওয়ার্ডে এ বছর তিনটি ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পেয়েছিলেন রাফাত এবং ‘নেক্সট ইনফ্লুয়েন্সার’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয় রাফাতকে। বর্তমানে নেক্সট ভেনচারসের নতুন উইং ‘পার্টনার ম্যানেজমেন্ট’-এ দায়িত্বরত রয়েছেন রাফাত।
রাফাত হাসান বাংলাদেশের কনটেন্ট লিখনী সেক্টরে অসামান্য কিছু এনে দেওয়ার জন্য একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি। তার অসামান্য প্রতিভা তাকে তার স্বপ্নের মতোই উপযুক্ত করে তুলেছে। আগামী দিনে এ খাতের গুরুত্ব অনুভব করেন তিনি। কনটেন্ট লিখনী এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ এবং তার নিজস্ব পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করা হলে রাফাত বলেন, ‘কনটেন্ট এমন একটি বস্তু, যেটা মানুষ সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন উপায়ে গ্রহণ এবং ব্যবহার করে থাকে।’ ‘কনটেন্ট’ আগামী পৃথিবীর ভবিষ্যৎ- কারণ যেকোনো কর্মক্ষেত্রের মানুষকেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে কনটেন্টকে ঘিরে আবর্তিত হতে হয়। কনটেন্ট লিখনী, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-বিজনেসের সাধারণ ভিত্তিগুলো সব কর্মজীবী মানুষকেই অতিক্রম করতে হয়। আমরা অনেকে বই পড়তে ভালোবাসি, সিনেমা দেখতে ভালোবাসি, কিংবা অন্যকিছু করতে ভালোবাসি। আমাদের এই ভালো লাগা, ভালোবাসাকে আমরা যখন ভাষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে প্রকাশ করতে চাই, তখনই সেটা কনটেন্টের আওতায় চলে আসে। আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, কনটেন্ট লিখনী, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া প্রমলশন, ই-বিজনেস ইত্যাদি নানান সফট স্কিল গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখবে।’
"