সামিয়া রহমান

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২

গাঁয়ের আলো ‘আমাদের বেলকুচি’

উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ সিরাজগঞ্জ। এই জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি উপজেলার নাম ‘বেলকুচি’। এই অঞ্চলটি একটি শিল্প এলাকা। এখানে তৈরি হয় লুঙ্গি, শাড়ি, গামছাসহ আরো অনেক কিছু। এই উপজেলার কতিপয় তরুণ মিলে একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করেন নাম দিয়েছিলেন ‘আমাদের বেলকুচি’। যেখানে এখন সদস্য সংখ্যা ৪৪ হাজার।

ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল। এরই মাঝে এই গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অর্জন অনেক। বিভিন্ন দুর্যোগের সময়, অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পাশে থেকে এই গ্রুপের নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে যাচ্ছেন। কাজগুলো হচ্ছে- করোনাকালীন তারা বিভিন্ন হতদরিদ্র পরিবারে খাবার নিশ্চিত করেছেন, পাশাপাশি করোনাভাইরাসে সবাই নিজদের জীবনের মায়া না করে মাঠ পর্যায়ে থেকে সবাইকে সতর্ক করেছেন। এছাড়াও বন্যার সময়ে বন্যার্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছেন।

রমজান মাসে প্রতিটি দিন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন বিভিন্ন এতিম খানা ও মাদরাসায়। পাশাপাশি ডোর টু ডোর রমাদান ফুড প্যাকেজ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তারা উপজেলার বিভিন্ন সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন, একটি রচনা প্রতিযোগিতা হয় ২০২০ সালে যেটার নাম ছিল ‘মুজিব বর্ষে কেমন বাংলাদেশ চাই’; অন্যটি ২০২১ সালে ‘আন্তঃস্কুল মেধাবী অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতা। এই দুটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের মাধ্যমে। তাদের সুন্দরভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মানিত করেন এবং ক্রেস্ট প্রদান করেন।

এই গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকদের রয়েছে নানা কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গভীর নলকূপের মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারে টিউবওয়েল স্থাপন করে দেওয়া। কারণ এ অঞ্চলটি শিল্প এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। গভীর নলকূপ ও টিউবওয়েল স্থাপনের ফলে এই এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা বিশুদ্ধ এবং সুপেয় পানি পান করার সুযোগ পাচ্ছে। এর বাইরেও বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসাসহ পথচারীদের সুবিধার্থে টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। করে দিয়েছেন মসজিদ এবং ওজুখানা। আরো করেছেন নানা মানুষের কর্মসংস্থান। যেমন- ভ্যান কিনে দেওয়া, ছাগল কিনে দেওয়া, সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া আরো অনেক কিছু।

এই কার্যক্রম সম্পর্কে গ্রুপের অন্যতম এক স্বেচ্ছাসেবক জাহিদ হাসান মিঠু বলেন, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি নানা রকম মানবিক কার্যক্রম চলমান রাখার। তারই অংশ হিসেবে টিউবওয়েল স্থাপন কার্যক্রম। কারণ আমাদের এখানে হতদরিদ্র পরিবারগুলো গভীর নলকূপ বা টিউবওয়েল স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানি পান করবে সেরকম আর্থিক সচ্ছলতা তাদের নেই। সেজন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি উপজেলাসহ আশপাশে যেসব দরিদ্র পরিবার রয়েছে তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করা। আমাদের টার্গেট পুরো জেলা নিয়ে কাজ করার। হাজার হাজার পরিবারের বিশুদ্ধ পানির অভাব এক দিন আমরা দূর করতে পারব বলে আশা করি। অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রবাসী মুসলিম ভাই-বোনদের যাদের অর্থায়নে আমরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এই মহতি কাজগুলো সম্পাদন করতে পারছি।

জাহিদ হাসান মিঠু জানান, উপজেলার বেকারদের জন্য একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর বিষয়টিও তাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close