reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ আগস্ট, ২০২২

বাকৃবির টিম উৎসব

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উৎসবমুখর রাখা, ঋতুভিত্তিক, জাতীয় উৎসব উদযাপন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১ম বর্ষের এক দল তরুণ উদ্যম শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গঠিত হয় ‘টিম উৎসব’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক ছাত্র সংগঠন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে টিম উৎসবের যাত্রা হলেও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। এরপর থেকেই একের পর এক উৎসবের আয়োজনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে উৎসবমুখর করে রাখছেন এই সংগঠনের সদস্যরা। ইতোমধ্যে ভিন্নধর্মী এই সংগঠন তাদের ভিন্নধর্মী কাজের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টিম উৎসবের শুরু এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের বর্ণনা আজ তুলে ধরা হলো। তাদের গল্প শুনেছেন তানিউল করিম জীম

যেভাবে শুরু : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একদল শিক্ষার্থী লক্ষ করল ক্যাম্পাসে শুধু অডিটোরিয়ামের অভ্যন্তরে গুটিকয়েক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া তেমন কিছুই আয়োজিত হয় না। এটি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যা সবাই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি মনে দাগ কেটেছিল তাদের। তাই তারা ঠিক করে আমাদের এই সবুজ ছায়ায় ঘেরা ১২০০ একরের প্রকৃতিকন্যাকে উৎসবমুখর করে তুলতে হবে। কাটবে ক্যাম্পাসের নিস্তব্ধতা। ‘যাপন নয় উদযাপন’- এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় টিম উৎসবের পথচলা। এই টিমের কাজই হলো ক্যাম্পাস উৎসবে মুখরিত রাখা। বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করা যাদের কাজ, তাদের নামই টিম উৎসব।

শুরুতে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন। তাদের লক্ষ্য ছিল ১৫ জন একটি টিম হিসেবে কাজ করবে। প্রথাগত নিয়ম থেকে একটু সরে এসে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতার জায়গা তৈরি করা ছিল এই সদস্যদের মূল লক্ষ্য। ছাত্রাবস্থা থেকে দায়িত্ব গ্রহণ, নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া, দলবন্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভেটো দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয় টিম উৎসব সদস্যদের।

বর্তমানে টিম উৎসবে সদস্য সংখ্যা ৫৩ জন। সাংগাঠনিক এ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বাকৃবির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক কৃষি অনুষদের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফসা তাসনিম।

টিম উৎসবের উৎসবগুলো-

চা উৎসব : বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম সংলগ্ন বকুলতলায় আয়োজিত হয় টিম উৎসবের প্রথম উৎসব। চায়ের ওপর ভিত্তি করেই যে একটি উৎসবের আয়োজন করা যায় তা করে দেখিয়েই শুরু হয় টিম উৎসবের পথচলা। শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী সবাই বরণ করে নেয় টিম উৎসবকে। হরেক রকমের চা, গান এবং একক ডেকোরেশনে সবার আকর্ষণ কাড়ে এ চা উৎসব। ক্যাম্পাসে এক চায়ে তোমাকে চাই কথার প্রচলন শুরু হয় এ উৎসবের মাধ্যমেই।

চিঠি উৎসব : ‘বাকৃবিকে লেখা চিঠি/কিছু কথা জমে থাকে/শুধু অনুভবে/না হয় বলে দিলাম/বাকৃবির তরে’। করোনাকালীন সময়ে যখন সবাই ক্যাম্পাস থেকে শত মাইল দূরে বাসায় বন্দি দিন কাটাচ্ছে। ক্যাম্পাসের হল বা জব্বার বা নদের পাড় বা কোনো মানুষকে স্মরণ করছে বারবার। যখন সবাই ক্যাম্পাসের অনুপস্থিতি অনুভব করছিল, তখন সবাই বাকৃবিয়ানের জন্য টিম উৎসব আয়োজন করে এই চিঠি উৎসবের। শতাধিক চিঠি আসে টিম উৎসবের ঠিকানায়। সব আবেগ ও শব্দের মিশ্রণকে সবার সামনে তুলে ধরে টিম উৎসব।

উৎসবে বর্ণিল বিশ্ব : বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের উৎসবের চিত্র বিভিন্ন। সেই সব চিত্রের বৈচিত্র্য তুলে ধরার আয়োজনই ছিল উৎসবে বর্ণিল বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী হয়ে থাকা যত নামকরা বা অনন্য উৎসব আছে, সবাইকে খুঁজে বের করে সবার সামনে তুলে ধরার একটি মাসব্যাপী আয়োজন করে টিম উৎসব।

আর্ট ফর হিউম্যানিটি : মে ২০২০ করোনাকালীন লকডাউনে আমরা যখন একদিকে আলস্য অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম তখন অন্যদিকে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছিল সমাজের খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং অসহায় মানুষগুলো। তাই ‘টিম উৎসব’ অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের জন্য আয়োজন করে একটি নন প্রফিট ফান্ড রেইজিং কার্যক্রম। যেখানে তারা নিজেদের চিত্রকর্ম এবং শিল্পকর্ম ইত্যাদি বিক্রির মাধ্যমে ফান্ড রেইজ করে। পরবর্তীতে সেগুলো দান করা হয় অসহায় মানুষদের মাঝে।

অনন্ত নক্ষত্রবীথি এবং একজন হুমায়ূন : টিম উৎসবের অনলাইনে করা একটি বড় ইভেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয় এই প্রোগ্রামমকে। বাংলার কিংবদন্তি সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠানটি। মাসব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে থাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। দেশের সব প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দশ হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে এই উৎসবে। কসপ্লে, বুক ফটোগ্রাফি, হ্যান্ড পেইন্টিং, ডিজিটাল পেইন্টিং, লিটারেচার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ছিল ফেসবুক লাইভ উইথ শাওন।

বসন্ত উৎসব : ক্যাম্পাসের জিমনেসিয়াম সংলগ্ন মাঠে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় বসন্ত। ভিন্ন রকমে বসন্তকে উপভোগ করার জন্য টিম উৎসবের এই আয়োজন। যা বাকৃবির সবার মনে নাড়া দেয়। উৎসবমুখর ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে টিম উৎসবের এই যাত্রাও সম্পন্ন হয় বিশাল সফলতার সাথে। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল কনসার্ট, নাগরদোলা, ছাত্র উদ্যোক্তা স্টল, কাঠি নৃত্য, ঘুড়ি উৎসব, সব চরিত্র কাল্পনিকসহ অনেক কিছু।

শ্রাবণ উৎসব : সেদিন শ্রাবণের আমন্ত্রণ শুধু ক্যাম্পাসের জন্যেই ছিল না। দুহাত বাড়িয়ে টিম উৎসব সাদরে আহ্বান জানিয়েছিল বর্ষাকে। শ্রাবণের এত সুন্দর আয়োজনে বর্ষা কি আর না এসে পারে! তাই তো টিম উৎসবের শ্রাবণ উৎসবে বৃষ্টিস্নাত হয়ে উঠে ১২০০ একরের সবুজ ক্যাম্পাস। সঙ্গে বৃষ্টিবিলাসে মেতে উঠে এখানকার শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিল শাড়ি-পাঞ্জাবি নানা রঙের মিল ছায়া। পাশাপাশি ছিল গান আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সবার মনে একটিই চাওয়া ছিল, এমন দিন বারবার ফিরে আসুক।

টিম উৎসবের সদস্যরা বলেন, আমরা সবসময়ই চেয়েছি ক্যাম্পাস সবসময় উৎসবে মেতে থাকুক। প্রতিটি উৎসবে সাজক নতুন সাজে, আর আয়োজন করতে চেয়েছি ‘নবান্ন’ যা আমাদের মাটির উৎসব এবং এই উৎসবের মাধ্যমে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা বজায় রাখতে চাই আমরা। আমরা চাই কৃষকের ঘরে যেমন নতুন ধান তোলার উৎসব শুরু হয় পুরো দেশ যেন বুঝে উঠতে পারে তার আনন্দ এবং একই সঙ্গে তার গুরুত্ব। এ ছাড়া আমাদের বিভিন্ন ঋতু বা উল্লেখযোগ্য কিছুদিনকেও উদযাপন করতে চাই আমরা যেমন-বর্ষা উৎসব, শারদেশরৎ, পিঠা উৎসব, বসন্ত উৎসব, হালখাতা , সংক্রান্তি, হুমায়ূন জয়ন্তী, ফল উৎসব, দুই দিনের বইমেলা, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসও আমরা উদযাপন করতে চাই। আমরা সবসময়ই আশা রাখি টিম উৎসবের সৃজনশীলতা বাকৃবিকে গতিময়তা দেবে, মানুষকে শুধু যাপন নয়, বরং উদযাপন করতে শেখাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close