reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বই আলোচনা : জনকের জন্য কবিতা

চোখের সামনে বঙ্গবন্ধু

জীবনকালে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’ বা ‘জাতির পিতা’ বলা হয়।

‘জনকের জন্য কবিতা’ কবি ও কথাসাহিত্যিক কবি আরিফ মঈনুদ্দীনের কবিতার বই। বইটি প্রকাশ করেছে বিশ্বসাহিত্য ভবন। আলোচ্য এই কবিতার বইয়ে কবি উৎসর্গ করেছেন বাংলার সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের হাত ধরে আমরা স্বাধীন হয়েছি। বইটিতে স্থান পেয়েছে- স্বপ্ন দেখার পর, জনকের রক্তের ধারা, তোমার কোনো প্রস্থান নেই, অমরাত্মার পদাবলি, আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা, দেখো কেমন শুয়ে আছি, রাজনীতির কবি, আকাশে বিশ্বাস ভঙ্গের আর্তনাদ, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, সূর্যের সমান উচ্চতায়, সময়ের চোখে এত অভিমান।

বইটি পাঠে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু চোখের সামনে নেমে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথিবীর অনেক কবিই লিখেছেন, তবে প্রত্যেক কবির কবিতাই ভিন্ন। এখানে বইটি থেকে ভিন্ন ভিন্ন কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে ধরা হলো-

‘আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে, এ তো আগস্টের শুরু/কে বলেছে এ বৃষ্টির জল- এ তো শোকের অশ্রুধারা ক্লান্তিহীন শোকগ্রস্ত মেঘের ক্রন্দন।’ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল এ দেশেরই সন্তানরা। শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে থামেনি তারা, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করেছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর আর্তনাদে প্রকৃতিও কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ছিল বুক। কবি এখানে মেঘের ক্রন্দনের কথা লিখেছেন তার কবিতায়।

‘অমরত্ব পেয়ে নেতা এক হাসে/সে হাসি তারাই টের পায় যারা ভালোবাসে।’ পৃথিবীতে অমরাত্মার মানুষ খুব বেশি নেই। আর থাকলেও তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বঙ্গবন্ধু, যার গর্জনে এ দেশের মানচিত্র তৈরি হয়েছে, শাপলায় ভরে উঠেছে ঠাকুরের বিল, কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে উঠেছে স্বদেশের মাটি। তাই কবি বলেছেন, পাকিস্তানি অনুচররা কখনোই বঙ্গবন্ধুর হাসি টের পাবে না। যে হাসিতে ফোটে ওঠে অমরাত্মার পদাবলি।

‘এসো আমার শয্যাপাশে- /দেখো কেমন শুয়ে আছি/কতদিন শুয়ে আছি...!’ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন, এ যেন জাগ্রত, এ যেন ঘুমের ভেতর থেকেও জেগে উঠে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে কথা কয় আর সেই কথা শুধু তারাই টের পায়, যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে, বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে।

‘অনুশোচনার দেয়াল বেয়ে টপটপ ঝরে পড়ল ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত,/দু লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত বিনয়ে সেঁটে বসল লাল সবুজের পতাকায়।’ আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মুক্ত হয়েছি, স্বদেশের নিশান উড়াচ্ছি মুক্ত হাওয়ায়। কিন্তু এই স্বাধীনতা এক দিনে আসেনি, শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল আমাদের পথ-ঘাট, অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আজ স্বদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়, মানচিত্র ভরে কৃষ্ণচূড়া ফোটে।

‘পৃথিবীর পথে হেঁটে যেতে যেতে/তাবৎ কবিরা আঙুল তুলে সগৌরবে বলে যেত- /রাজনীতির কবি এক এসেছিলেন ধরায়...।’ বঙ্গবন্ধু পৃথিবীতে এসেছিলেন বাংলার মুক্তির কাণ্ডারি হয়ে। তাই তো পৃথিবীর কবিরা বঙ্গবন্ধুকে সগৌরবে রাজনীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আজও লেখা হচ্ছে অজস্র গান-কবিতা। ‘জনকের জন্য কবিতা’ বইটিতে ফোটে উঠে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিমূর্তি, যেখানে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধুর জীবন অধ্যায়।

যারা যাপিত জীবনকালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে ওঠে, তার চিন্তা ও কর্ম দিয়ে এই শ্রেষ্ঠ হওয়ার পেছনে তাকে মানুষের হয়ে উঠতে হয়। সেই রকম একজন মানুষের নাম বঙ্গবন্ধু। আরিফ মঈনুদ্দীন সেই মহান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন ‘জনকের জন্য কবিতা’।

* মাইন সরকার

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close