জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের
২ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের হাতছানি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। টাইগারদের দেওয়া ৩৩২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার আর ৫ উইকেট। অপরদিকে কিউইদের করতে হবে ২৭০ রান।
শুরুতেই ৩ উইকেট হারানোর পর দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে। দেখেশুনে খেলতে থাকেন এই কিউই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত তাকেও পিচে থাকতে দিলেন না অফস্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৭৬ বলে ২২ করা এই ব্যাটারকে শাহাদাত হোসেনের ক্যাচ বানান বাঁহাতি স্পিনার। এরপর উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরে ফেরত পাঠান তাইজুল। ১৬ বলে ৬ রান করে শর্টলেগে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই কিউই ব্যাটার।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩১ ওভারের খেলা শেষে কিউইদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৬৬ রান। ২১ রান নিয়ে খেলছেন ড্যারেল মিচেল, অপরপ্রান্তে ৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন গ্লেন ফিলিপস। জিততে হলে আরও ২৬৬ রান করতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
এর আগে একে একে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ কিউই টপঅর্ডার। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই টম ল্যাথামকে (৬ বলে ০) সাজঘরে ফেরত পাঠান শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের ফুল লেন্থের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের কাঁটা হয়ে ব্যাট করছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে উইলিয়ামসনকে সেটি করতে দিলেন না তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের শুরুর দিকেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে এই কিউই ব্যাটারকে আউট করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। ২৪ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান উইলিয়ামসন।
এরপর ব্যাট করতে নামা হেনরি নিকোলসে সাজঘরের পথ দেখান অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ২ রানে করে নাইম হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই কিউই ব্যাটার।
এর আগে ২ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ দিনে ৭ উইকেটে ১২৬ রান করেছে বাংলাদেশ। এর আগে গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ২১২ রান করেছিল টাইগাররা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হাঁকিয়েছেন রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের মোট দাঁড়িয়েছে ৩৩৮ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩১৭ রানে গিয়ে থামে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। ম্যাচের তৃতীয় দিনের শুরুর দিকে টাইগারদের থেকে ৭ রান এগিয়ে ইনিংস শেষ করে সফরকারীরা। সেই লিড পার হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৩৮ রানের সুবাদে ৩৩১ রানের লিড পায় কিউইরা।
ম্যাচের চতুর্থ দিনটা যেমন হওয়ার কথা তেমন ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ব্যাট করতে নেমে যেন তাড়াহুড়ো করেই আউট হয়েছেন ব্যাটাররা। চতুর্থ দিনে ৯৬ রান নিতেই চলে গেছে ৪ উইকেট। অথচ তৃতীয় দিনের খেলা দেখে মনে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে রানপাহাড় দাঁড় করাবে বাংলাদেশ। সেটি সম্ভবত আর হচ্ছে না। তবে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগেই লড়াই করার মতো পুঁজি পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশন শেষ করে ৭ উইকেটে ৩০১ রানের লিড দিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে গেছেন টাইগাররা।
দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছেন শান্ত। গতকালের অপরাজিত ১০৪ রানের সঙ্গে আজ মাঠে নেমে মাত্র ১ রান যোগ করতে পেরেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার শান্ত। দিনের প্রথম বলে ১০৫ রানে খেলা শান্তকে ফিরিয়েছেন কিউই পেসার টিম সাউদি। উইকেটরক্ষক ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তার কিছুক্ষণ পরেই উইকেট বিলিয়ে দিলেন শাহাদাতও। ইশ সোধির বলে লেগবিফোর উইকেটের (এলবিডব্লিউ) ফাঁদে পড়েন শাহাদাত হোসেন। ১৯ বলে ১৮ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
গতকালের ৪৩ রানকে বাড়িয়ে ফিফটি হাঁকিয়েছেন মিস্টার ডিফেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। ১১৬ বলে ৬৭ রান করে অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার।
মেহেদি হাসান মিরাজ ৭৬ বলে ফিফটি (৫০) করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। নুরুল হাসান সোহান করেছেন ১০ রান। অবশেষে ৩৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। ২৬ রানে ছিল না ২ উইকেট। ৩০ বলে ১৭ রান করে অ্যাজাজ প্যাটেলের অনেক বেশি টার্ন করা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ওপেনার জাকির হোসেন।
দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। সাউদির বলে ড্রাইভ খেলেন শান্ত, বল বোলারের হাত স্পর্শ করে ভেঙে যায় ননস্ট্রাইকের স্টাম্প। সেখান থেকে দলীয় সংগ্রহ ১১১ তে নিয়ে যায় চা-বিরতিতে যান শান্ত ও মুমিনুল।
অপ্রত্যাশিত রানআউটের মাধ্যমে শতরানের (৯০) কাছাকাছি এসে ভেঙে যায় শান্ত-মুমিনুলের জুটি। ভুল বোঝাবুঝিতে ৬৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরত যান মুমিনুল।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর দলের হাল ধরেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। অভিজ্ঞ মুমিনুল ৪০ রানে ফিরলেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৯২ বলে সেঞ্চুুরি তুলে নিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শতক হাঁকাতে শান্ত খেলেছেন ৯টি চারের মার।
কিউইদের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেছেন অ্যাজাজ প্যাটেল। ২ উইকেট পেয়েছেন ইশ সোধি। একটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন টিম সাউদি ও গ্লেন ফিলিপস।