মিজান রহমান

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

আসন সমঝোতা না হলে বেঁকে বসতে পারে জাপা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সমানে-সমান প্রার্থী দিয়ে মাঠে রয়েছে। দুদলই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অথচ বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল সংসদের প্রধান এই বিরোধী দলের। জাতীয় পার্টির নেতারা আশা করেছিলেন এবারও তফসিল ঘোষণার আগেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা হবে তা হয়নি। এ কারণে জাপার কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সব আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে। ওইসব আসনে সমাঝোতা না হলে বেঁকে বসতে পারে জাতীয় পার্টি। দলটির শীর্ষ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টিকে রহস্যের বেড়াজালে পড়তে হয়। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা হতে হবে। ৫০টি আসনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলদের কাছে ছাড় চাওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে জাতীয় পার্টি কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।’

জাপা সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার আগে আসন সমঝোতা নিয়ে উভয় দল একাধিকবার বৈঠকে বসলেও সমঝোতা হয়নি।

তবে জাতীয় পার্টি আশাবাদী, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই এ বিষয়ে সমঝোতা হবে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য কমপক্ষে ৩৫টি আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করবে বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা না হলে নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়ানোর আলোচনা রয়েছে জাতীয় পার্টিতে। বিশেষ করে যারা বর্তমানে সংসদ সদস্য তারা নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করতে নারাজ। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য বা আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে দেশ-বিদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কৌশলের অংশ হিসেবে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। মূলত আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ীই জাতীয় পার্টি ২৮৯ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। জাপার দায়িত্বশীলরা বলছেন, দলটির বর্তমান ২৩ এমপির আসনে প্রাথমিকভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া দেন-দরবার শেষে আরো অন্তত ১০-১৫টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে পারে ক্ষমতাসীনরা। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ৩২ থেকে ৩৫টি আসন ছাড় পাবে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে যেসব এমপি বিগত দুই মেয়াদে লাঙ্গল মার্কায় এমপি নির্বাচিত হয়েও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তাদের আওয়ামী লীগ গুড বুকে রেখেছে।

জাপার একটি সূত্রের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার আলাপ না হলেও জাপাকে ফের প্রধান বিরোধী দলে বসাতে কিছু আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ। তবে জাপার প্রত্যাশা ৫০ আসন হলেও সংখ্যার বিষয়ে কিছুই বলা হচ্ছে না। তবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় জাপাকে আসন ছাড়া হবে তা বলতে পারছেন না দলটির নেতারা।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি নেই জাপার। তবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘এবার আমাদের নীতি একলা চলো।’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জেতা অসম্ভব বলে মনে করা জাপা প্রার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘ভয় পেলে নির্বাচন করার দরকার নেই। ২৮৮ আসনে লাঙ্গল আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না।’

পটুয়াখালী-১ আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। তারপরও হাওলাদার বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে হৃদয়ের সমঝোতা রয়েছে। তিনি বলেন, আসন নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।

জাপার এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ভোটের হিসাবে লাঙ্গলের অবস্থান জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনেরও পেছনে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জাপার পক্ষে দু-তিনটি আসন পাওয়াও কঠিন। আবার সমঝোতা করলে আন্তর্জাতিক মহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে জাপা এবং জোটের শরিকদের আগের মতো সরাসরি আসন ছাড়ছে না আওয়ামী লীগ। এতে অন্তত ২৯৫ আসনেই নৌকা বা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতবেন। তাহলে আগামী সংসদে বিরোধী দল না থাকার বিড়ম্বনায় পড়বে সরকার। এতে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি। সেই কারণে কিছু আসনে নৌকাকে হারিয়ে লাঙ্গলকে জেতানো হবে বলে মনে করছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই নেতা। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এই কৌশল মানবেন কিনা, তা নিয়ে তার নিজেরও সংশয় রয়েছে।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,জাতীয় পার্টি,জাপা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close