reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জুন, ২০২৪

ঈদযাত্রা

চাপ নেই কমলাপুর স্টেশন-পাটুরিয়ায়, ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে মানুষ

আর মাত্র দুই দিন, এরপরেই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সব সরকারি অফিস আদালত। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ বেসরকারি অফিসও। ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটছেন সবাই। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে দলে দলে শহর ছাড়ছে হাজারো মানুষ। তবে প্রতিবার ঈদযাত্রায় যে ভোগান্তি হয় এবার তা অনেকটাই কম।

সাধারণত ঈদ এলেই ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় থাকে। সেই কারণে নিজ গন্তব্যের ট্রেনে উঠতে খুব বেগ পোহাতে হয়। রীতিমতো যুদ্ধ করে ট্রেনে উঠতে পারলেও অতিরিক্ত ভিড়ে নিজের সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না অনেকে। তবে, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা রেলওয়ে রেলস্টেশনের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। অন্যান্য ঈদে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই রেলওয়ে স্টেশনে যে পরিমাণ ভিড় থাকে এবং যে পরিমাণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, এবার তার ছিটেফোঁটাও নেই। ফলে স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে উঠতে পারছেন যাত্রীরা। এতে করে বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলদিয়া নৌপথ। বছরে দুটি ঈদসহ যেকোনো উৎসবের সময় এই ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের। প্রায় দুই বছর আগে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে গেছে এই রুটে। ফলে ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে পদ্মা পারাপার হচ্ছে যানবাহন।

শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক(ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনো টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় অবাঞ্ছিত কোনো মানুষকে দেখা যায়নি। এতে স্টেশনের প্লাটফর্ম এলাকার পরিবেশ অনেকটাই ভালো।

ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সেজন্য প্লাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে ‍র‌্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। প্লাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে যাত্রীদের টিকিট চেক করতে। তবে, এবার টিকিটের সঙ্গে এনআইডি মেলাতে দেখা যায়নি। যাদের টিকিট নেই, তারা ১-৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারপর যাত্রীরা পরিচ্ছন্ন একটি পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন।

নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট পরে ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে রংপুর এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের পীরগাছাগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে যতটা কষ্ট হয়েছে, ততটা কষ্ট ট্রেনে চড়তেও হয়নি। রিকশা থেকে নামার পর ট্রেন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে এসেছি। আগে প্লাটফর্ম এলাকায় মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হোঁচট খেতে হতো, এবার কারো সঙ্গে ধাক্কা পর্যন্ত লাগেনি। প্ল্যাটফর্মে এসে দেখলাম ট্রেন দাঁড়ানো আছে। ট্রেনে উঠতেও তেমন কোনো ভিড় ছিল না। ‌ সুন্দরভাবে নিজের আসন খুঁজে পেয়েছি। এমন ব্যবস্থাপনা থাকলে রেলওয়ে ভালো করবে।

জামালপুর এক্সপ্রেস প্রেমের যাত্রী গোলাম সারওয়ার বলেন, ট্রেনে টিকিট কাটার পরেও কয়েক বছর আগে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করতে খুব কষ্ট হতো। প্লাটফর্ম এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় থাকতো, ট্রেনে নিজের সিট পর্যন্ত যাওয়া যেত না। গত দুই বছর যাবত এই ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। টিকিট সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হলেও অন্তত নিজের আসনে যেতে না পারার দুঃখটা লাঘব হয়েছে। আসলে স্টেশন এরিয়া এমনই থাকা উচিত। বাইরের কোনো মানুষ থাকবে না, টিকিটসহ যাত্রী ছাড়া।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময় ছেড়ে গেছে। এখন আর প্রথম দিনের মতো ট্রেনে কোনো বিলম্ব নাই।

অন্যদিকে পাটুরিয়া ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার সকাল থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ হয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে ঘাট এলাকায় যানবাহনের তেমন চাপ না থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি ও লঞ্চে করে নদী পার হতে পারছেন তারা। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে পদ্মা নদী পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছোট বড় মিলে ১৭টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে চলাচল করছে।

অন্যদিকে যাত্রীদের পারাপারে ৩৩টি লঞ্চের মধ্যে পাটুরিয়ায় চলাচল করছে ১৯টি লঞ্চ আর আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে চলছে ১৪টি। রাজধানী ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার নবীনগরসহ আশপাশের যাত্রীরা বাসে করে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসছেন। এরপর লঞ্চে ও ফেরির টিকিট কেটে নদী পার হচ্ছেন। তবে ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকায় স্বস্তিতেই নদী পার হয়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে ঘরমুখো এসব মানুষ।

সাভার থেকে বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছেন রাজু আহমেদ। তিনি জানান, সাভার থেকে সেলফি পরিবহনে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সহসাই ঘাটে পৌঁছেছেন। মহাসড়কে যানজট না থাকায় বাসে ভোগান্তি হয়নি। আর ঘাটেও যানবাহন ও যাত্রী কম, তাই নদী পার হতে কোনো রকমের ভোগান্তি হবে না।

রাসেল নামে আরেক যাত্রী জানান, দুই বছর আগেও পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই, ঘাটে আসার পরপরই ফেরিতে বা লঞ্চে উঠতে পারছি। ঘাট পার হতে এখন আর ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান,ঈদযাত্রায় ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। যাত্রীদের নিরাপদে নদী পারাপার করার জন্য ঘাট কর্তপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নৌবহরে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কোনো যাত্রী ও যানবাহনকে দীর্ঘ সময় ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যাত্রী ও যানবাহনগুলো ঘাটে আসার পর পরই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। যার ফলে ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামের বাড়ি ফিরছে মানুষ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close