সংসদ প্রতিবেদক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলে এলপিজির মূল্য কমানোর সুযোগ নেই : নসরুল হামিদ

এলপিজি আমদানি নির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য না কমালে রেগুলেটরী কমিশন কর্তৃক বাজারে বেসরকারি এলপিজির মূল্য কমানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরো জানান, বর্তমানে প্রতি ১২.৫ কেজি সরকারি এলপিজির মূল্য ৫৯১ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি বেসরকারি এলপিজির মূল্য ১২২ টাকা ৮৬ পয়সা। সে অনুযায়ী বহুল ব্যবহৃত বেসরকারি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের মূল্য ১ হাজার ৪৭৪ টাকা।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এলপিজি গ্যাস আরো সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার জন্য কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় বৃহদাকার এলপিজি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লতিফপুর মৌজায় বটলিং প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনে উৎসাহীকরণে নীতিমালা সংশোধনের কার্যক্রম চলছে। এতে এলপিজির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সহনীয় রাখা সম্ভব হবে।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, দেশে চাহিদার বিপরীতে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।বর্তমান দেশে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তিনি আরো বলেন, চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের সঙ্গে দৈনিক প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট সমতুল্য আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিদ্যমান ঘাটতি ও ভবিষ্যতে গ্যাস চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খনন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১০টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। বিদ্যমান দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির সক্ষমতা সম্প্রতি দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের মোট সক্ষমতা দৈনিক ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, ভবিষ্যতে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আনকনভেনশনাল রিসোর্স থেকে গ্যাস উত্তোলন, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি আমদানি ও পাইপলাইনে গ্যাস আমদানির বিষয়াদি বিবেচনা করে ২০৪০-৪১ অর্থবছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস উৎপাদন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০-৩১ অর্থবছরে দৈনিক ৪ হাজার ৬০৮ মিলিয়ন ঘনফুট ও ২০৪০-৪১ অর্থবছরে দৈনিক ৫ হাজার ২৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবারাহ করা যাবে।

সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপিসি পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মোট আমদানির পরিমাণের ৫০ ভাগ জিটুজি এবং ৫০ ভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। বর্তমানে বিপিসি ছয়টি দেশের (ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জিটুজি ভিত্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশে ২৩ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪১টি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১১ হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানিনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বর্তমান ইউনিটের দ্বিগুণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন ক্ষমতার একটি নতুন রিফাইনারি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পটি ২০২৮-২৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close