নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

স্বতন্ত্রে জমবে নির্বাচনের মাঠ

ছবি: সংগৃহীত

আগে দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতেন তাদের বলা হতো ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’। এসব ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’র বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার পাশাপাশি দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছে।

দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দলীয় কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এখন পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসার কোনো লক্ষণ নেই। অনেকে মনে করছেন, সেই জায়গাটি পূরণ করবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনের মাঠ জমিয়ে তুলবেন তারাই। এ ব্যাপারে সরকারের সায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় নেতারা চাইলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতেই পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দলের প্রয়োজনেই কৌশলগত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা থাকতে পারে কারো কারো। কৌশলগত কারণে দলের প্রয়োজনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুমতি।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের চিঠি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। এরই মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তাদের অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা শফী আহমেদ, সাবেক উপমন্ত্রী মুরাদ হাসান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহিসহ অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে শফী আহমেদ বলেন, আমার আসন নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালীয়াজুড়ি)। এলাকার মাটি মানুষের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমি যাতে নির্বাচন করি, সেটা দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের বহুদিনের চাওয়া। নানা কারণে দলের নমিনেশন পাইনি তাই আর নির্বাচন করা হয়ে উঠেনি। এবার যেহেতু স্বতন্ত্র নির্বাচনে দলের কোনো বাধা নেই তাই স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এলাকায় দল তো বটেই, এর বাইরেও প্রচুর মানুষ আমার সমর্থনে এরই মধ্যে নেমে পড়েছেন। তারা বলছেন, আপনি শুধু নমিনেশন নিয়ে আসেন, ভোট আমরা দেব। আর ভোট কারচুপিও আমরাই প্রতিরোধ করব। এলাকার মসজিদ ও মক্তব কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও বলছেন, আমরা একজন সাহসী ও সত্যবাদী লোক হিসেবে আপনার পক্ষে থাকব। আমি আশাবাদী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং জনগণ আমাকে বিজয়ী করবেন।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে স্বতন্ত্র পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ডা. মুরাদ হাসান এমপি। রবিবার সকালে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ব্যাংক চালান দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তার পক্ষে পৌর যুবলীগের সদস্য মোখলেছুর রহমান এ মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘোষিত প্রার্থীর নামের তালিকায় ঠাঁই না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ডা. মুরাদ। পৌর যুবলীগের সদস্য মোখলেছুর রহমান জানান, ডা. মুরাদ হাসান এমপির নির্দেশক্রমেই তার পক্ষে স্বতন্ত্র পদে মনোনয়নপত্র ক্রয় করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ব্যারিস্টার সুমনের এমন ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অনেকেই ফেসবুকের ওই পোস্টে সুমনকে নির্বাচনে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দেন।

এদিকে, দল থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা। আর যে দলের হয়ে রাজনীতি করেছেন দীর্ঘদিন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ওপর নির্ভর করে’ বেঁচে থাকা সংসদের সেই বিরোধী দলটিকেই ‘পরগাছা’ হিসেবে দেখছেন এই রাজনীতিক।

রংপুর-১ আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন পরগাছা দলে রূপান্তর হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে আর কত দিন? আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করব।’

জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন কিনা জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি তো মনোনয়ন ফরম নেইনি। তারপরও মনোনয়ন দিলে পরে বলব।’

রাঙ্গা বলেন, ‘আমি তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলাম, এবারও নির্বাচন করব। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’

জাতীয় পার্টিতে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং চোয়ারম্যান জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বে রওশন পক্ষে অবস্থান নিয়ে গত বছর আলোচনায় আসেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। এর রেশ ধরে ১৪ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। এরপর থেকে ‘রওশন বলয়ের নেতা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। রওশন এরশাদ আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ৩ জনের জন্য। সেখানেও রাঙ্গার নাম নেই। রাঙ্গা বলেন, ‘আমি তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলাম, এবারও নির্বাচন করব। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’

অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মু. জিয়াউর রহমান। মাহিয়া মাহি বলেন, আমি মনোনয়ন পাইনি, এ নিয়ে একটু মন খারাপ হয়েছে বটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই সঠিক বলে আমি মনে করি।

মাহির কথায়, অনেক দিন ধরে যারা রাজনীতি করে আসছেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি আমার কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমি নৌকার পক্ষে কাজ করব। আর মানুষের জন্য যেহেতু কাজ করব বলে রাজনীতিতে নেমেছি, এই কার্যক্রম চলবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পছন্দ করি, তার সব সিদ্ধান্তকে আমি সঠিক মনে করি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্নে মাহি জানান, ‘যেহেতু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সবখানে যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়। সেটার জন্য আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে এখনো সিদ্ধন্ত নেইনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব।’ এছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি, সিলেট-০৬ আসন থেকে কানাডা।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ) সংসদীয় আসন থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। সোমবার দুপুর ১টার দিকে মোবাইল ফোনে ইমদাদুল হক বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের জনগণের ভোটে চারবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। ঢাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্য আছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনে নির্বাচন করব এবং জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিদ্রোহী প্রার্থী,আওয়ামী লীগ,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close