নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রশ্ন ফাঁস মামলায় চার্জশিটে বুয়েট শিক্ষক বাদ কেন জানতে রুল
সরকারি পাঁচ ব্যাংকে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরকে কেন, কীভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে- তা জানতে চেয়েছে আদালত। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত করে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিতে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদশক রণপ কুমার ভক্ত এ কথা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় বিভিন্ন কেন্দ্রে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। এক হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭জন।
পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থীরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নেমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার কথাও জানায়।
ঢাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে প্রশ্ন ফাঁস করে উত্তর বিক্রির অভিযোগে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া ও প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানায় ডিবি। ওই তদন্তেই বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নিখিল রঞ্জন ধরের নাম পাওয়ার কথা জানান ডিবির কর্মকর্তারা। পরে ২১ নভেম্বর নিজ বিভাগের প্রধানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে বুয়েট প্রশাসন।
প্রশ্ন ফাঁসের ওই ঘটনায় বাড্ডা থানায় করা মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক শামীম আহমেদ। মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে তিনি মামলার অভিযোগ থেকে শিক্ষক নিখিল রঞ্জনকে বাদ দেওয়ার কথা জানান।
এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, নিখিল ধর আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে মুদ্রিত প্রশ্নপত্রের কোনো কপি পাননি। দেলোয়ার হোসেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানান।
উপ-পরিদর্শক শামীম বলেন, তিনি দেলোয়ার হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করে প্রশ্নফাঁস ঘটনায় অধ্যাপক নিখিলের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ বা অভিযোগ পাননি।
প্রশ্ন ফাঁসের ওই ঘটনায় সেসময় রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন (৩০), পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন (৩৮) ও রাইসুল ইসলাম স্বপন (৩৬) এবং জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামলকে (৩৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হাফিজ আক্তার জানিয়েছিলেন, কয়েকটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের কাছে ৫-১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। চক্রটি প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁসের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে ৬০ কোটি টাকা। প্রশ্ন নিতে যারা টাকা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়, তাদের ‘গোপন বুথে’ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করানো হয়। এভাবে ৬০-৭০ ভাগ এমসিকিউ এর সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়েছে। টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র পেয়েছেন এমন দুই শতাধিক পরীক্ষার্থীর তালিকা পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এ কর্মকর্তা।
পিডিএস/এমএইউ