reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জীবিত শিশু উদ্ধার 

ছবি: রয়টার্স

গাজার অধিবাসী সাবরিন ছিলেন সাতমাসের গর্ভবতী নারী। কিন্তু নিজের কলিজার টুকরো সন্তানকে চোখে দেখার সৌভাগ্য হলো না সাবরিনের। ইসরায়েলি হামলায় সন্তান তার কোলে আসার আগেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তিনি।

গত ২০ এপ্রিল মধ্যরাতে রাফায় হামলা চালায় ইসরায়েল। যেখানে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন সাবরিন, তার স্বামী এবং তাদের তিন বছর বয়সি কন্যা সন্তান।

হামলায় প্রথমে মারাত্মকভাবে আহত হন সাবরিন। আর তার স্বামী ও কন্যা সন্তান মারা যান। যখন উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন সাবরিনের গর্ভে থাকা বাচ্চাটি জীবিত ছিল।

সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ সাবরিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে বাঁচাতে ইমারজেন্সি সিজার করেন।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাবরিনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু নিরন্তর চেষ্টা করে শিশুটিকে বাঁচাতে সমর্থ হন চিকিৎসকেরা।

এই বিষয়ে রাফার ইমিরাতি হাসপাতালের জরুরি নবজাতক ইউনিটের প্রধান ডা. মোহাম্মদ সালামা বলেন, শিশুটি তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

বর্তমানে শিশুটির ওজন মাত্র ১.৪ কেজি। জন্মের সময়ই তাকে এক বিরাট অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছে।

দায়িত্বরত চিকিৎসক সালামা বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও সংকটাপন্ন। শ্বাসকষ্টের সমস্যাটি মূলত অপ্রাপ্তবয়সে জন্মের কারণে হয়েছে। শিশুটির বর্তমানে মায়ের গর্ভে থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাচ্চাটি এই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মাসখানেকের বেশি হাসপাতালে তত্ত্বাবধানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ডা. সালামা বলেন, এরপরে আমরা শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববো। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। শিশুটি বেঁচে থাকলেও পুরোপুরি এতিম হয়ে জন্মেছে।

শিশুটির নামকরণের জন্য বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। তার মা অবশ্য তাকে ‘রুহ’ নামে ডাকতে চেয়েছিলেন; যার আরবি অর্থ আত্মা বা স্পিরিট।

শিশুটির পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যরা হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন। অনাথ শিশুটিকে একটি নতুন পারিবারিক জীবন দিতে চান তারা। একইসাথে তাদের ভেতর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও পরিস্থিতি নিয়ে হতাশার বিষয়টিও ফুটে উঠেছে।

শিশুটির দাদি মিরভাত আল-সাকানি তাদের সাথে হওয়া অন্যায় সম্পর্কে কথা বলেন। তাদের দাবি, যুদ্ধের সাথে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও তারা ভুক্তভোগী হচ্ছেন।

মিরভাত বলেন, আমার মেয়ে গর্ভবতী ছিলেন এবং তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। আমার ছেলে ও তার কন্যাও সাথে ছিলেন।

মিরভাত আরও বলেন, আমার ছেলের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখনও তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? আমরাও জানি না এগুলো কেন কিংবা কীভাবে হচ্ছে। আমরা জানি না কেন তারা শুধু নারী ও শিশুদেরকে টার্গেট করছে।

শিশুটির চাচা রামি আল-শেখ জানান, শিশুটির বাবা নাপিত হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বলেন, তাদের দোষটা কী? পুরো একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র সদস্য হিসেবে বেঁচে আছে ছোট বাচ্চা মেয়ে!

সাবরিনের দাদি আহালাম আর-কুর্দি শিশুটিকে লালন পালনের দায়িত্ব নিতে চান। তিনি বলেন, ও আমার ভালোবাসা, আমার আত্মা। ও তার বাবার স্মৃতি বহন করছে। আমি ওকে দেখে রাখবো।

এদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪ হাজার জন নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।

এর আগে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১২০০ জন নিহত হয় আর জিম্মি করা হয় অন্তত ২৫৩ জনকে।

ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকদেরকে টার্গেট করছে না। বরং হামাস বেসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও গত ২০ এপ্রিলও রাফায় ইসরায়েলের হামলায় ১৫ জন শিশু নিহত হয়েছে।

নিহত কয়েক শিশুর বাবা আবেদ আল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সব সন্তান ও স্ত্রী মারা গেছেন। মৃতদেহের মধ্যে একজন পুরুষ খুঁজে বের করুন! সবই নারী ও শিশু।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close