বাইডেন নয়, প্রার্থী হিসেবে মিশেল ওবামাকে চান ডেমোক্রেট পার্টি
চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এত প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা চলছে ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রিপাবলিকান পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। তবে সাম্প্রতিক এক জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে জো বাইডেনকে ছাড়িয়ে গেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন জরিপ সংস্থা রামুসেন রিপোর্টস প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির ৪৮ শতাংশ সদস্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে মিশেল ওবামাকে দেখতে চান। অন্যদিকে, বাইডেনকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান ৩৮ শতাংশ ডেমোক্রেট।
এদিকে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকেও পেছনে ফেলেছেন মিশেল ওবামা। তাছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ২০ শতাংশ মানুষ বাইডেনের প্রার্থিতা বাতিল করে মিশেল ওবামাকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
তাছাড়া, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান মাত্র ১৫ শতাংশ ভোটদাতা। অন্যদিকে, নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চান ১২ শতাংশ ভোটদাতা।
এ বিষয়ে মিশেল ওবামা বলেছেন, জনগণের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে সরকার তাদের জন্য কিছু্ই করে না। আমার কাছে গণতন্ত্র রক্ষা করে রাখাটা খুব কঠিন মনে হয়। জনগণের জন্য কী করা উচিত এবং আমার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো গণতান্ত্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত থাকি। তাই নির্বাচনের বিষয়টি ভাবলেই আমি নার্ভাস হয়ে যাই।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে দুই মেয়াদে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে।
তবে নির্বাচন পূর্ববর্তী সব জরিপে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাইডেনকে ছাড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছেন। দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন ৪৬ শতাংশ জনমত ট্রাম্পের পক্ষে। আর বাইডেনকে চান ৪৪ শতাংশ মার্কিনি।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন ট্রাম্প। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা অনেক দূর গড়িয়েছে।
সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা বিমানে উঠতে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার ঘটনাগুলো তার শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে খুব একটা ভালো ধারণা দেয় না। তাছাড়া বাইডেনের বয়স আশির কাছাকাছি (৭৮ বছর) হওয়ায় মার্কিন নাগরিকদের অনেকেই মনে করেন, রাজনীতি থেকে তার অবসর নেওয়া উচিত।
বিপাকে আছেন স্মৃতি বিভ্রমের ঘটনা নিয়েও। কয়েকবার গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় ভুলে গেছেন বা ভুল বলেছেন এমন ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সপ্তাহ দুয়েক আগে নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, আমার স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে।
বাইডেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তার তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু কঠোর সমালোচনাও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্টের স্মৃতিশক্তিতে উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নথিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ আনাটা মুশকিল কারণ, বিচারের সময় বাইডেন বিচারকের সামনে নিজেকে একজন সহানুভূতিশীল, সদালাপী ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বয়স্ক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবেন, যেমনটা তিনি আমাদের সামনেও করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছেন, বয়স হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সূত্র: এএফপি, এনডিটিভ