জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের জোট ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ ১৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। রবিবার (৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন শিক্ষক নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, এই বিদ্যাপীঠকে মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত করার প্রত্যয় নিয়ে তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। বহুমাত্রিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় শিক্ষক মহলে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবতীয় অনিয়ম দূরীকরণ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের অংশীজনদের স্বার্থ-সংরক্ষণসহ শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষক ঐক্য পরিষদ এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বলে জানান শিক্ষক নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, সদস্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক শামছুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন, সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল রকিবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ ঘোষিত ইশতেহারে মধ্যে আছে শিক্ষকদের গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বার্ষিক গবেষণা ফান্ড’ গঠন, গবেষণা খাতে নিয়মিত বরাদ্দ নিশ্চিত করা ও গবেষণা প্রকল্পে বাজেট বৃদ্ধি করা। অস্থায়ী পদে কর্মরত শিক্ষকদের স্থায়ী পদে পদায়ন, পদোন্নতির যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি ও শর্ত পূরণের দিন থেকেই নিজ পদে স্থায়ী করা, উচ্চ-শিক্ষার্থে বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষকদের ন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত ও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষাবৃত্তি প্রচলনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া আইইএলটিএস, টিওইএফএল, জিআরই, জিএমএটি ইত্যাদি পরীক্ষার পরিপূর্ণ ব্যয়ভার বহন করা, শিক্ষকদের পুস্তক ও গবেষণা ভাতা বৃদ্ধি, বিভাগগুলোতে প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ ও কর্মরত শিক্ষকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলানসহ আসবাবপত্র ও শিক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ইশতেহারে আরো আছে জীববিজ্ঞান অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ, আইন অনুষদ, আইবিএ ও আইআইটি ভবন নির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখা, বিভিন্ন অনুষদের একাডেমিক ভবনগুলোর অসম্পূর্ণ কাজ দ্রুত সম্পন্নকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সহবস্থান নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসকে মাদক সেবন ও মাদক বিপণনের পরিবেশ থেকে মুক্ত করার কথা জানিয়েছে শিক্ষক ঐক্য পরিষদ।

ইশতেহারে নবনির্মিত হলগুলোসহ বিভিন্ন ভবনে উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও কম্পিউটার ক্রয় বাবদ প্রদেয় ঋণ প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলেছে শিক্ষক নেতারা। এছাড়া তদন্ত সাপেক্ষে যৌন নিপীড়নের সকল অভিযোগের নিষ্পত্তি করা; উন্নয়ন প্রকল্প ও সমাবর্তনের আয়-ব্যায়ের হিসাবসহ সকল আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সকল বিধিবদ্ধ পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে।

পিডিএস/আরডি